কাতিলা গাম খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নিন

কাতিলা গাম শব্দটি আমাদের অনেকেরই পরিচিত। কাতিলা গাম দেখতে সাদা বা লালচে বর্ণের। আমরা তো তাল মিশ্রি চিনি সবাই, ঠিক ঐরকম। উদ্ভিদের শিকড়ের রস শুকিয়ে এটা সংগ্রহ করা হয়।

এটা সাধারণত স্বাদহীন অর্থাৎ কোন স্বাদ নেই এতে, কোন গন্ধ নেই এবং পলিস্যাকারাইডের পানিতে দ্রবণীয় মিশ্রন এবং পানিতে বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে নরম হয়ে ফুলে যায়।

তো আজ আমরা এই কাতিলা গাম এর উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। মনে রাখবেন, কাতিলা গাম কিন্তু অনেক জটিল ও কঠিন রোগের কাজ করে।

কাতিলা গাম এর উপকারিতা:

১. দিনে দুই বার হালকা গরম পানিতে কাতিলা গাম ভিজিয়ে তাতে একটু মধু, লেবু ও চিনি অথবা তাল মিশ্রি দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে শরীর শীতল থাকবে এবং সারাদিনের ক্লান্তি কেটে যাবে।

যারা গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম সহ্য করতে পারে না এটা তাদের জন্য খুবই উপকারী। হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং শরীর শক্তিশালী হয়। যৌনতা স্থায়ী হয়।

২. আমাদের শরীরের অন্ত্রের জন্য এবং হজমের জন্য কাতিলা গামের জুড়ি নেই। কাতিলা গাম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই সাহায্য করে। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের এনজাইম যা খাদ্য হজম এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে।

৩. শারিরীক মেটাবলিজম উন্নত করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৪. এটার প্রভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার পেট ভরা থাকবে এবং আপনার অন্ত্রকে সুস্থ রাখবে।

৫. জানলে অবাক হবেন যে, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরী ও অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যও কাতিলার মধ্যে রয়েছে যা ত্বক থেকে ব্রণ কিংবা বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ত্বকের পিগমেন্টেশন, ব্রণ, ব্রেকআউট ও পোড়া থেকেও ত্বককে রক্ষা করে।

৬. কাতিলা গামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম। তাই এটা চুলের জন্য বেশ উপকারী। চুল পড়া রোধ করে এবং চুলকে ঘন কালো হতে সাহায্য করে।

৭. যেসব পুরুষের যৌন ক্ষমতা তুলনামূলক কম কিংবা শারিরীক দূর্বলতায় ভোগেন তাদের জন্য কাতিলা গাম উৎকৃষ্ট একটি পথ্য। নিয়মিত নিয়ম অনুযায়ী সেবন করলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ভালো ফল পাওয়া যায়।

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এক কথায় বলা যায়, কাতিলা গাম শক্তি বৃদ্ধিতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে, গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি অটুট রাখতে, চকচকে ত্বক রাখতে, যৌন ক্ষমতা বাড়াতে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চরম কাজ করে।

কাতিলা গাম যেভাবে খাবেন:

অল্প পরিমাণ পানিতে কাতিলা গাম ভিজিয়ে রাখলে তা অল্প সময়ের মধ্যে জেলির মতো হয়ে যায়। তখন ওই জেলির সাথে লেবু, মধু, লাল চিনি কিংবা তাল মিছরি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে খেতে হয়।

প্রতিদিন খালি পেটে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার হয়। পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে অসুবিধা হলে দুধ কিংবা শরবতের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।

কাতিলা গামকে বলা যায় দুর্বল পুরুষের জন্য এক নম্বর ওষুধ। পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে এটি একটি কার্যকরী হারবাল ওষুধ হিসেবে বিবেচিত।

সাধারনত যারা যৌন সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তারা এই কাতিলা গামকে ইসবগুলের ভুষি, কালোজিরা, অশ্বদানা ও তাল মাখনা দিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে নিয়মিত খেতে পারেন। অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

পৃথিবীতে যতো ওষুধ রয়েছে সব কিছুরই কিছু না কিছু সাইড ইফেক্ট রয়েছে। কাতিলা গামও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না। অতিরিক্ত খেলে বদহজম হতে পারে।

কাতিলা গাম যেহেতু আঠা বা জেল জাতীয় পদার্থ, তাই অন্য কোন ওষুধের সাথে এটা সেবন করা যাবে না। কারন, তাতে ওই ওষুধের সাথে কাতিলা গাম লেগে থাকতে পারে।

অ্যালোপ্যাথিক কিংবা হোমিওপ্যাথি ওষুধের সাথে কাতিলা গাম ভুল করে হলেও সেবন করতে যাবেন না। তাতে ওইসব ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হতে পারে। বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

এটা সেবন করার সময় অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। ব্যক্তিক্রম হলে আপনার অন্ত্র ব্লক হতে পারে।

কাতিলা গাম অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখবেন। কম ভিজলে পেটে গিয়ে ভুলে উঠতে পারে।

আর অবশ্যই কাতিলা গাম খালি পেটে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে অবশ্যই ভালোভাবে পানিতে ভিজিয়ে নরম ও ফুলে উঠলে খাবেন। তা না হলে সমস্যা হতে পারে।

কাতিলা গামের দাম:

কাতিলা গাম এক দামের নয়, একেক বাজারে একেক রকম দাম। দামটা পরিমাণের উপর নির্ভর করে। তবে সাধারনত গড়ে প্রতি কেজি কাতিলা গামের দাম ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা হয়ে থাকে। আপনার নিকটস্থ স্থানীয় বাজারে খুঁজলেই কাতিলা গাম পাবেন।

পরিশেষে বলা যায়, কাতিলা গাম যেহেতু গাছের আঠা ( একটা নির্দিষ্ট গাছের শিকড় থেকে সংগ্রহ করা হয়) তাই এটা সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

যদি সম্ভব হয় তাহলে একজন ইউনানী চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেবেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পড়েই তা নিজের মতো করে ওষুধ বানিয়ে খাওয়া উচিত নয়।

ডাক্তারের কাছে শুনলে আপনি আরও বাস্তবিক অনেক কিছু জানবেন। তবে আমরা কেবল সুস্পষ্ট একটা ধারণা দিয়েছি। তবে কাতিলা গাম যে খুবই উপকারি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top