কোটা আন্দোলন নিয়ে যে কথা কেউ বলেনি

কোটা আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি ৫ জন মারা গেছে এবং আহত হয়েছে আরও অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও এর সাথে যোগ দিচ্ছে। সমগ্র দেশের সাধারন ছাত্রছাত্রী একসাথে আন্দোলন করছে। অন্য কেউ নয়, কোন রাজনীতিবিদ নয়,  দেশের মেধাবীরা, ভবিষ্যতের কর্ণধার’রা আন্দোলন করছে – সুতরাং তাদের এ আন্দোলনকে আমি স্বাগত জানাই।

দেশের ছাত্র সমাজ কখন আন্দোলন করে? একটি যৌক্তিক বিষয় বছরের পর বছর ধরে যখন অযৌক্তিকভাবে বন্ধ থাকে, তা নিয়ে যখন কোন কথা হয়না, কোন সংস্কার হয় না ঠিক তখনই আন্দোলন হয়। ইতিপূর্বে ছাত্ররা যেসব আন্দোলন করেছে তন্মধ্যে কয়টি অসফল হয়েছে বলতে পারবেন কি!

যখন আন্দোলনে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একসাথে একাত্মতা ঘোষণা করে, কেউ কেউ জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না তখন এ আন্দোলন নিয়ে ভাবা উচিত। সরকারের উচিত তাদের কথাগুলো শুনা। তারপর যতোটা সম্ভব একটা ভালো সমাধান আনা প্রয়োজন।

কোটা সিস্টেম থাকুক, একেবারে উঠিয়ে দিতে হবে সেটার পক্ষে আমি নই। কিন্তু সংস্কার করা যে প্রয়োজন তা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে সব কোটা মিলে প্রায় ৪৭% চলে যায় মেধাবীদের বাইরে। সহজ কথায়, ১০০ জনকে চাকরি দেয়া হলে ৪৭ জনকে দেয়া হয় কোটার বিনিময়ে। আর বাকি ৫৩% হয় মেধা ও পরীক্ষার মাধ্যমে। এতো বড় একটা বৈষম্য – অবশ্যই এর সংশোধন প্রয়োজন।

কোন মূর্খ গোষ্ঠী তাদের স্বার্থের জন্য আন্দোলন করছে না, অন্য কোন ইস্যু তারা তৈরী করছে না, তাদের যে ন্যাহ্য পাওনা তা তারা চাচ্ছে সুতরাং সরকারের অবশ্যই কর্ণপাত করা উচিত। যতোটা সম্ভব সংস্কার এনে এই আন্দোলনের ইতি টানা উচিত। কারন, বিভিন্ন আন্দোলনের কারনে অনেক সময় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য হতে পারে।

যারা দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের আমি মন থেকে শ্রদ্ধা করি। তারা জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন সুতরাং তাদের ভুলে গেলে আমরা মানুষের কাতারে থাকবো না। কিন্তু আমার জানামতে, তাদের জন্য সরকার যথেষ্ট করেছে। বিভিন্ন দিক থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছে যেটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক সম্মানের।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এই ভাতা হতে বঞ্চিত। তারা হয়তো কোন কারনে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারেনি, হয়তো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে থাকে – তাদের কথা কেউ জানেই না। আবার অনেক চালাক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বানিয়ে সরকারের এই ভাতা ভোগ করছে। এ ব্যাপারে সরকারের খুব ভালোভাবে নজর দেয়া উচিত।

এখন কোটা আন্দোলন বিষয়টি দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। সুতরাং বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মারাও গেছে। তবুও কিন্তু আন্দোলন থেমে নেই। তাই আমি মনে করি, কোটা বিষয়টার সংশোধন আনা প্রয়োজন।

ইতিপূর্বের বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে যে, ছাত্ররা বেশিরভাগ সময়ই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করেছে। তারা সরকারের পক্ষে বিপক্ষে যাচ্ছে না। তাদের নির্দিষ্ট দাবি থাকে – সেটাতে যদি সরকার একটু সুনজর দেয় তাহলেই তাদের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও এ আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তারাও কোটা প্রথার সংস্কার চায়।

তাই পরিশেষে আমি বলতে চাই, কোটা আন্দোলনকে নিয়ে নীরবে বসে থাকার সুযোগ নেই। তাহলে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যেতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছি। কারও মৃত্যু কাম্য নয়। সম্প্রতি ৫ জন মারা গেছে। আর যেন কেউ মারা না যায়। সরকারের ভাবমূর্তিও যেন ক্ষুন্য না হয়। সর্বোপরি দেশে শান্তি শৃঙ্খলা সব সময় বজায় থাকুক – এটাই চাই।

আরও পড়ুন: দলিল লিখতে ক্রেতা বা গ্রহিতার যে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top