শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা আমাদের করা উচিত

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিটি পরিবারের উচিত নানারকম পদক্ষেপ নেয়া। কারন, কেবল একটি পরিবার পারে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।

সরকার দিতে পারে প্যাসিভ সাপোর্ট। প্রত্যক্ষভাবে একজন শিশুকে সবরকম সাপোর্ট সরকার কোনভাবেই দিতে পারে না। সুতরাং এখানে পরিবারের ভূমিকাই মুখ্য।

শিশুরা নিজেরা কিছু বলতে পারে না। হয়তো ইশারা-ইঙ্গিত এর দ্বারা কিছু বোঝাতে পারে। তাই শিশুর যত্নে কোন ছাড় নয়। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত।

আজ আমরা শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে জানবো। শিশুকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটা পরিবার কতোটা শক্তভাবে দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে সেটাও জানবো।

 শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়:

পুষ্টি:

  • শিশুদের বয়স অনুযায়ী সুষম খাবার প্রদান: প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করুন। কারন, এই খাবারগুলো শিশুর দৈহিক গঠনে একদম সহায়ক।
  • মাতৃদুগ্ধ: নবজাতককে ছয় মাস পর্যন্ত কেবল মাতৃদুগ্ধ পান করান এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধের সাথে অন্যান্য বাড়তি খাবার দিন।
  • হাত ধোয়া: খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার প্রশিক্ষণ দিন। নিয়মিত হাত ধৌত করলে বিভিন্ন রোগ জীবানু হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • পরিষ্কার পানি: নিরাপদ পানি পান নিশ্চিত করুন। পানির অপর নাম জীবন। প্রচন্ড গরমের সময় শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথেষ্ট পানি পান নিশ্চিত রাখুন।

স্বাস্থ্য:

  • নিয়মিত টিকা: জাতীয় টিকাদান কর্মসূচী অনুযায়ী সকল প্রয়োজনীয় টিকা দিন। কোন টিকাই বাদ দেবেন না।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। অন্তত শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিজে নিজে করতে যাবেন না।
  • পরিষ্কার পরিবেশ: ঘরবাড়ি ও আশেপাশ পরিষ্কার রাখুন। এতে অন্তত মশার উৎপাত হতে রেহাই পাবেন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: শিশুদের বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। একজন মা হিসেবে শিশুর সাথে প্রয়োজনে আপনিও ঘুমান।

নিরাপত্তা:

  • দুর্ঘটনা প্রতিরোধ: বিদ্যুৎ, ছুরি, কাঁচি, ওষুধ ইত্যাদির মতো বিপজ্জনক জিনিসপত্র শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। এসব দিয়ে কখনো খেলতে দিবেন না।
  • নিরাপদ যানবাহন: শিশুদের যানবাহনে চলাচলের সময় সর্বদা সিটবেল্ট ব্যবহার করুন।
  • নজরদারি: শিশুদের সবসময় নজরদারিতে রাখুন, বিশেষ করে যখন তারা বাইরে থাকে। আর মেয়ে শিশুদের যার তার সাথে খেলতে দেবেন না।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি: শিশুদের যৌন নির্যাতন, হুমকি, বুলিং ইত্যাদির বিষয়ে সচেতন করুন এবং বিপদে পড়লে কীভাবে সাহায্য নিতে হবে তা শেখান।

মানসিক স্বাস্থ্য:

  • ভালোবাসা ও স্নেহ: শিশুদের ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদান করুন। ভালোবাসা ও স্নেহ শিশুদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে।
  • মানসিক সমর্থন: তাদের মানসিক সমস্যাগুলো শুনুন এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ নিন।
  • ইতিবাচক পরিবেশ: একটি ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ তৈরি করুন। ভালো পরিবেশে শিশুরা ভালো কিছুই শিখতে পারে।
  • বিশেষজ্ঞদের সাহায্য: শিশুর কোন রোগ বালাই, কোন মানসিক সমস্যা, কোন বিরূপ আচরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

শিশুদের যা শেখাবেন:

  • স্বাস্থ্যকর অভ্যাস: শিশুদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে শেখান। এতে তারা বিভিন্ন দিক থেকে সুস্থ থাকবে।
  • স্বাস্থ্যসেবা: স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দিন। স্বাস্থ্য সেবার প্রতিটি বিষয় হাতে কলমে শেখানোর চেষ্টা করবেন।
  • জীবন দক্ষতা: জীবন দক্ষতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শেখান। তবে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে এটা অবশ্যই শেখাবেন।
  • শিক্ষা: শিক্ষার গুরুত্ব ও সুযোগ সম্পর্কে সচেতন করুন। নিজেরা যতোটুকু পারেন ততোটুকু শেখাতে কখনো কমতি রাখবেন না। মনে রাখবেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।

পরিশেষে বলা যায়, শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবার হলো মূল ভিত্তি। প্রাথমিকভাবে সব ধরণের সহযোগিতা পরিবার থেকেই করতে হয়।

পরিবার হলো শিশুর জন্য মূল শিক্ষালয়। পরিবার থেকে শিশুরা কথা বলা শিখে, ভদ্রতা শিখে, ভালো-মন্দ শিখে ইত্যাদি। তাই প্রতিটি পরিবারের উচিত – শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কড়া নজর রাখা।

আরও পড়ুন: কাতিলা গাম খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top