বাংলাদেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা বা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়, যা সাধারণত জরুরি অবস্থায় বা বিশেষ সংকটময় সময়কালে কার্যকর হয়। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা প্রদান করেছে। এর ফলে সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
বিচারিক ক্ষমতা ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পর সেনা কর্মকর্তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এর ফলে তারা নিম্নলিখিত কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পারবে:
- গ্রেফতার: সেনা কর্মকর্তাদের সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারবেন। পাশাপাশি, তারা পুলিশের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও কার্যকর করতে সক্ষম হবেন।
- তল্লাশি ও উদ্ধার: বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য তল্লাশি পরিচালনা করতে পারবেন।
- বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ: কোনো বেআইনি সমাবেশ দেখা দিলে, সেনাবাহিনী তা ছত্রভঙ্গ করতে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বেসামরিক বাহিনীর সহায়তা নিতে পারবে।
- বিচারিক সিদ্ধান্ত: সেনাবাহিনী বিচারিক সিদ্ধান্তের অধিকার লাভ করে, যেমন অপরাধীদের জামিন মঞ্জুর বা অস্বীকৃতি জানানো।
সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার প্রভাব
সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অতীতেও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী এই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট ও ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় সেনাবাহিনী বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে।
তবে, সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে মতভেদ দেখা গেছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অপরদিকে, অনেকে মনে করেন, এটি সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রাপ্তির ফলে সেনাবাহিনী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬টি ধারা অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। এটি দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত ৭ দিনের রিমান্ডে