আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েরা নানা আকর্ষণীয় সুযোগের মাঝে বেড়ে উঠছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি, বিনোদনের অফুরন্ত মাধ্যম, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে তাদের জীবনযাত্রা বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়েছে।
কিন্তু এই পরিবর্তনের সাথে সাথে বেড়ে চলছে নেশার প্রবণতাও। মাদক, ইন্টারনেট, গেমিং, এবং অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেক ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে, শিক্ষাজীবন নষ্ট হচ্ছে, এবং সমাজে ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। এই সমস্যা থেকে তাদের উদ্ধার করে সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে।
নেশার কারণ:
নেশার কারণ একক নয়, বরং বহুমুখী। পারিবারিক অশান্তি, পিতামাতার নিরপেক্ষতা, বন্ধুদের প্রভাব, সামাজিক চাপ, এবং মানসিক অস্থিরতা নেশার প্রধান কারণগুলির মধ্যে।
এছাড়াও, সহজলভ্য মাদক, ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার, এবং নিয়ন্ত্রণহীন বিনোদনের মাধ্যম নেশার প্রবণতাকে আরও বৃদ্ধি করছে।
উদ্ধারের উপায়:
নেশার হাত থেকে ছেলেমেয়েদের উদ্ধারের জন্য আমাদের সকলেরই সচেতন হতে হবে এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পরিবারের ভূমিকা:
পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পিতামাতাদের সন্তানদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে, তাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, এবং সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
সন্তানদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে হবে। নিয়মিত পারিবারিক আড্ডা, বিনোদন, এবং খেলাধুলার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেশা-বিরোধী শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা উচিত। নেশার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে এবং তাদের নেশা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত।
সমাজের ভূমিকা:
সমাজের সকল স্তরের মানুষ নেশা-বিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারে। নেশাক্তদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা করতে হবে।
নেশার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত এবং মাদকের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারের ভূমিকা:
- নেশা-বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
- নেশা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা।
- নেশা প্রতিরোধ ও পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
- নেশা-বিরোধী প্রচারণায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা উন্নত করা।
নিজস্ব প্রচেষ্টা:
- নেশার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে নিজেকে সচেতন করা।
- নেশার প্রতি প্রলোভন প্রতিরোধ করা।
- সুস্থ অভ্যাস ও বিনোদনের মাধ্যমে সময় কাটানো।
- মানসিক চাপ মোকাবেলায় সঠিক পন্থা অবলম্বন করা।
- প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণ করা।
পরিশেষে বলা যায়, নেশা একটি জটিল সমস্যা, কিন্তু সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা থেকে ছেলেমেয়েদের উদ্ধার করতে পারি।
পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, এবং সরকার – সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করা। ছেলেমেয়েদের নেশার হাত থেকে রক্ষা করে তাদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবন গড়ে তোলার জন্য আমাদের সকলেরই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
মনে রাখবেন: নেশা কোন সমাধান নয়, বরং সমস্যার সূচনা। সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য নেশার হাত থেকে মুক্ত থাকা অপরিহার্য।
লেখক: মো. আজগর আলী (করতোয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক)
আরও পড়ুন: দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে সরকারের ভূমিকা