মানবজাতি দিনের দিন ধ্বংসের পথে যাচ্ছে এবং ইসলাম বিমুখ হচ্ছে কিনা এই প্রশ্নটি বেশ জটিল এবং এর উত্তর নির্ভর করে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসের উপর।
ধ্বংসের পথে কি আমরা?
আমরা যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি, তাতে অনেকেই মনে করেন আমরা ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। পরিবেশের ঝুঁকি, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার, সামাজিক বিভাজন, এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি – এসব বিষয় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কা তৈরি করে।
ইসলাম থেকে কি বিচ্যুৎ হয়ে যাচ্ছি?
অনেক মুসলিম মনে করেন সমাজে ইসলামের মূল্যবোধ ও নীতিমালা থেকে বিচ্যুতি ঘটছে। নৈতিকতার অবক্ষয়, ধর্মীয় অনুশীলনের অবহেলা, এবং ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ বৃদ্ধি – এসব বিষয় তাদের উদ্বেগের কারণ।
এখন বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:
ধ্বংসের পথে কি আমরা?
- পরিবেশের ঝুঁকি: জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার গ্রহের জন্য মারাত্মক হুমকি।
- পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার: পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা এবং অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি।
- সামাজিক বিভাজন: বর্ণবাদ, ধর্মীয় গোষ্ঠীগত সহিংসতা, এবং অর্থনৈতিক অসাম্য সমাজে বিভাজন তৈরি করছে।
- অর্থনৈতিক অস্থিরতা: বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থির, যার ফলে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং অসমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইসলাম থেকে কি বিচ্যুৎ হয়ে যাচ্ছি?
- নৈতিকতার অবক্ষয়: মিথ্যাবলা, প্রতারণা, লোভ, এবং স্বার্থপরতা সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- ধর্মীয় অনুশীলনের অবহেলা: অনেকে নামাজ, রোজা, এবং জাকাতের মতো ধর্মীয় কর্তব্য পালন করছে না।
- ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ: ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমাধানের পথ:
পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবেলা: পরিবেশগত নীতি গ্রহণ, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানো, এবং নবায়নযোগ্য উৎস ব্যবহার বৃদ্ধি।
পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ: পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি প্রণয়ন এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্বের জন্য কাজ করা।
সামাজিক বিভাজন কমানো: সহিষ্ণুতা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি, বৈষম্য দূরীকরণ, এবং সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলা: টেকসই অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং অর্থনৈতিক সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা।
নৈতিক মূল্যবোধ পুনরুজ্জীবিত করা: সৎ, ন্যায়পরায়ণ, এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া।
ধর্মীয় কর্তব্য পালন: নামাজ, রোজা, এবং জাকাতের মতো ধর্মীয় কর্তব্য পালন করা।
সকলের জন্য শান্তি ও সহনশীলতা প্রচার করা: ধর্ম, জাতি, বা বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি দেখানো।
শেষ কথা হচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আমাদের আজকের কর্মের উপর। আমাদের যদি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হয়, তাহলে আমাদেরকে ব্যক্তি ও সমাজ হিসেবে পরিবর্তন করতে হবে।
আমাদের নৈতিক মূল্যবোধে ফিরে আসতে হবে, ধর্মীয় কর্তব্য পালন করতে হবে, এবং সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে।
মনে রাখবেন: এই বিষয়টি বেশ জটিল এবং এর কোন সহজ উত্তর নেই। প্রত্যেকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস অনুযায়ী বিষয়টি বিচার করার অধিকার আছে। গুরুত্বপূর্ণ হলো এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।
লেখক: মো. আজগর আলী (করতোয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক)
আরও পড়ুন: নেশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ: ছেলেমেয়েদের রক্ষা করুন, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন!