বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের জনসংখ্যার বিশাল অংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এখানে প্রধান কিছু ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করা হলো:
কৃষি নীতি: সরকারের একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং কার্যকর কৃষি নীতি প্রণয়ন করা উচিত যা কৃষকদের প্রয়োজন এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নীতিতে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন, প্রযুক্তি ব্যবহার, কৃষি ঋণ, বীমা, বিপণন, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদির বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।
কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন: উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ব্যবস্থা, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদির গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য সরকারের বৃহৎ বিনিয়োগ করা উচিত। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও কার্যকর করে তোলা এবং কৃষকদের কাছে গবেষণা ফলাফল সহজে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
প্রযুক্তি ব্যবহার: কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকারকে উৎসাহিত করা উচিত। কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করা উচিত।
কৃষি ঋণ: কৃষকদের কৃষিকাজের জন্য সহজলভ্য এবং কম সুদের হারে ঋণ প্রদান করা উচিত। ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ঋণের অপব্যবহার রোধের ব্যবস্থা করা উচিত।
বীমা: কৃষকদের ফসল বীমা, পশু বীমা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বীমা প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত। বীমা প্রক্রিয়া সহজ করা এবং বীমা প্রদানের দ্রুততা বৃদ্ধি করা উচিত।
বিপণন: কৃষিজাত পণ্যের উন্নত বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। কৃষকদের তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতে সহায়তা করা উচিত।
অবকাঠামো উন্নয়ন: কৃষিজাত পণ্য পরিবহনের জন্য রাস্তাঘাট, সেতু, নদী, খাল, বন্দর ইত্যাদির উন্নয়ন করা উচিত। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা উচিত।
কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: কৃষকদের কৃষি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা এবং কৃষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা উচিত। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে আরও শিক্ষার্থী ভর্তি করার ব্যবস্থা করা উচিত।
কৃষি বাজার: কৃষিজাত পণ্যের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা উচিত। কৃষকদের জন্য বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।
কৃষি বিপণন: কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য সরকারের সহায়তা প্রদান করা উচিত। কৃষকদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও প্রচারণার জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
কৃষি গবেষণা: কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা উচিত। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও কার্যকর করে তোলা এবং কৃষকদের কাছে গবেষণা ফলাফল সহজে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ: কৃষি প্রযুক্তি ও জ্ঞান কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি আরও জোরদার করা উচিত। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা উচিত।
পরিবেশ রক্ষা: কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি রোধ করার জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। টেকসই কৃষি পদ্ধতি প্রচার করা এবং কৃষকদের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করা উচিত।
কৃষি নীতি: নিয়মিত কৃষি নীতি পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করা উচিত। কৃষকদের মতামত নিয়ে কৃষি নীতি প্রণয়ন করা উচিত।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: কৃষি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত। উন্নত দেশগুলির কাছ থেকে প্রযুক্তি ও জ্ঞান অর্জনের জন্য চেষ্টা করা উচিত।
কৃষি ব্যবস্থাপনা: কৃষি ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করে তোলার জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কৃষি ডেটাবেস তৈরি করা এবং কৃষি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, কৃষি নীতি নিয়ে সরকার যথেষ্ট আগ্রহীভাবে কাজ করছে। কৃষকদের জন্য নীতি যে নেই বিষয়টি এমন নয়।
তবে যা রয়েছে তার মধ্যে হয়তো কমতি রয়েছে। তাই, কৃষকদের জন্য পূণরায় নীতিগুলো সংযোজন বা বিয়োজন করা উচিত যাতে করে কৃষকরা সম্মানের সাথে বাঁচতে পারে।
লেখক: মো. আজগর আলী (করতোয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক)
আরও পড়ুন: কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয় | কৃষির জন্য বরাদ্দে বাজেট বাড়ানো দরকার