ডায়রিয়া একটি রোগ। ছোট বড় সবারই হতে পারে। ডায়রিয়া হলে এক দিনের মধ্যেই রোগী চরম অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তখন হসপিটালাইজেশন ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
আজ আমরা ডায়রিয়া হলে প্রাথমিক কিছু করণীয় সম্পর্কে জানবো। এক কথায় এসবকে সচেতনতা হিসেবে অভিহিত করা যায়।
আর এই সচেতনতাগুলো খুব দরকার। কারন, এই সচেতনতাই পারে একজন রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নিই।
ডায়রিয়া হলে করণীয়:
প্রথমত, পানিশূন্যতা রোধ করুন। ডায়রিয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় পান করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে শরীর থেকে হারিয়ে যাওয়া পানি ও লবণ পুনরুদ্ধারে সাহায্য হয়। রোগী একটু স্বাভাবিক থাকে।
তরল পানীয় ছাড়া আর কি খাওয়ানো যেতে পারে:
- ORS বা খাওয়ার স্যালাইন: এটি ডায়রিয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো তরল পানীয়। প্যাকেটের গায়ে যেভাবে তৈরী করার নিয়ম লেখা থাকে তা দেখে তৈরী করুন। একবার তৈরী করার পরে সেটা ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
- নারিকেলের পানি: এতে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যা পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে। বেশি করে ডাব খাওয়াতে হবে।
- চিড়ার পানি: চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি এই পানীয়টি হালকা ও সহজে হজম হয়। ডায়রিয়া রোধে এটা অনেক বেশি কার্যকর।
- পাতলা ঝোল: মুরগির ঝোল, মাছের ঝোল, বা শাকের ঝোল পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে। তবে খুব পাতলা ঝোল রান্না করা যাবে না। স্বাভাবিক রান্না করে রোগীকে ঝোলটা একটু বেশি খাওয়াবেন।
যেসব খাবার খাওয়ানো যাবে:
- BRAT খাবার: BRAT হল Banana (কলা), Rice (ভাত), Applesauce (সেবের আচার), এবং Toast (টোস্ট)। এই খাবারগুলি হালকা, সহজে হজম হয় এবং পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
- অন্যান্য হালকা খাবার: আপনি সাদা পাউরুটি, মসুর ডাল, ডিম, বা রুটিও খেতে পারেন।
- চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: এই ধরণের খাবারগুলি পাতলা পায়খানা আরও খারাপ করতে পারে। তাই এসব খাবার ভুলেও খাওয়া যাবে না।
ওষুধ:
- ডায়রিয়ার ওষুধ: ফার্মেসীতে অনেক ধরণের ডায়রিয়ার ওষুধ পাওয়া যায়। আপনার ডাক্তার আপনাকে উপযুক্ত ওষুধ নির্ধারণ করে দেবেন। আপনি নিজে থেকেই কোন ওষুধ খাবেন না।
- প্রোবায়োটিক: প্রোবায়োটিক হল সুস্থ ব্যাকটেরিয়া যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট বা দই খাওয়া উপকারী হতে পারে। তবে এটাও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাবেন।
কোন সময় ডাক্তার দেখাবেন:
- যদি আপনার ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয় (২ দিনের বেশি);
- যদি আপনার পায়খানার সাথে রক্ত থাকে;
- যদি আপনার জ্বর থাকে এবং মাত্রা অনেক বেশি হয়;
- আপনি যদি তীব্রভাবে পানিশূন্য হন এবং শরীরে কোন শক্তি না থাকে;
- যদি আপনার ৫ বছরের কম বয়স হয়।
ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য:
- নিয়মিত হাত ধোয়া: খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে সাবান ও পানি দিয়ে আপনার হাত ভালোভাবে ধোয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রতিরোধ হয়। সুতরাং এই নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
- খাবার ও পানির স্বাস্থ্যবিধি: দূষিত খাবার ও পানি এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে ঢাকা শহরে সুপেয় পানির বড় অভাব। তাই পানি পানে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- টিকা: রোটাভাইরাস টিকা নিন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিন।
পরিশেষে বলা যায়, ডায়রিয়া সাধারন আবার ভয়ংকর। যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেন তাহলে রোগী মারাও যেতে পারে। বিশেষ করে, বাচ্চাদের বেলায় এই ভয়টা বেশি থাকে।
তাই ডায়রিয়া হলে কোন অবহেলা নয়। সম্ভব হলে শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর নিজে নিজে কখনো চিকিৎসা করতে যাবেন না। শুধু ডায়রিয়া নয়, যেকোন রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।