হোমিওপ্যাথি মূলত হলো বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে যেকোন রোগের একাধিক লক্ষণের জন্য মাত্র একটি ওষুধ নির্বাচন করা হয়।
হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক হলেন স্যামুয়েন হ্যানিম্যান। তিনি বেশ কয়েক বছর গবেষণার পর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করেন।
৭০ এর দশকে বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির প্রচলন বেশ ভালোই ছিল। তখনকার চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার বিস্তর তফাৎ লক্ষ্য করা যায়।
সত্যি বলতে কি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো সবসময় গবেষণার বিষয়। আর এই গবেষণা তখন হতো। কিন্তু বর্তমানে আর এই গবেষণা হয় না। তাই তৎকালীন চিকিৎসা পদ্ধতি আর বর্তমান চিকিসা পদ্ধতির মধ্যে এতো তফাৎ তৈরী হয়েছে।
আগেকার হোমিওপ্যাথির সাথে বর্তমান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার তফাৎ:
আগেকার হোমিওপ্যাথি সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল। বর্তমানেও আছে তবে সব জায়গায় নয়। আগে একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার একজন রোগীকে নানাভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতো।
সব লক্ষণাবলী হাতে-কলমে শুনতো এবং বুঝতো। তারপর একটি মাত্র ওষুধ নির্বাচন করতো এবং ওই একটি ওষুধ দিয়েই রোগী সুস্থ হয়ে যেত।
কিন্তু বর্তমানে এর উল্টো পরিবেশ আমরা দেখতে পাই। এখন হোমিওপ্যাথি দোকানে গেলে অ্যালোপ্যাথির মতোই এক গাদা ওষুধ দিয়ে দেয়। আমি আসলে সবার কথা বলছি না।
সব ডাক্তার কখনোই এক নয়। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগ ডাক্তারই কেবল ব্যবসার স্বার্থে রোগীকে প্রয়োজন ছাড়াও ওষুধ দিয়ে দেয়।
আমরা আগে জানতাম যে, কেবল অ্যালোপ্যাথিতেই বুঝি এরকম হয়। আসলে একসময় মানুষের এরকম ধারণা ছিলো যে, কম টাকায় ভালো চিকিৎসা কেবল হোমিওপ্যাথিতেই সম্ভব।
কিন্তু এই শর্ত আর বর্তমানে নেই। বর্তমানে ভালো মানের হোমিও চিকিৎসা করতে গেলেও অনেক টাকা লাগে। অনেক টেস্ট করতে হয়।
আর আরেকটা ব্যাপার হলো, হোমিওপ্যাথিতে লিকুইড জাতীয় ওষুধ বাদেও অ্যালোপ্যাথির মতো নানারকম ওষুধ বের হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের ট্যাবলেট, মলম, ক্রীম, সিরাপসহ ইত্যাদি।
আগে কিন্তু এতসবের প্রচলন ছিল না। যেমন, সালফার নামে একটি হোমিও ওষুধ ছিল। সেটার বিভিন্ন পাওয়ার (শক্তি) রোগীর উপর অবস্থাভেদে প্রয়োগ করা হতো। এর বাইরে তেমন কোন ওষুধ দেয়া হতো না।
কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্নরকম। আপনি বড় বড় হোমিও দোকনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবেন যে, ঠিক অ্যালোপ্যাথির মতো সব ধরণের ওষুধই পাওয়া যায়।
কিছু ডাক্তার রোগীকে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী সব একসাথে প্রয়োগ করে। তার মানে হলো, একটা না একটা তো কাজ করবেই।
এই এতসব কথা বললাম, সবকিছুর পেছনে উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হলো স্বার্থ অর্থাৎ বেশি টাকা আয় করা। এই বেশি টাকা আয় করতে গিয়েই কিছু ডাক্তার এভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দূর্বল করে ফেলছে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ফলপ্রসু। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থার কারনে মানুষ ধীরে ধীরে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।
সবক্ষেত্রে যে কেবল অবনতি হয়েছে বিষয়টি তাই নয়। কিছু ক্ষেত্রে উন্নতিও হয়েছে। কিন্তু সেই জায়গায় যারা গরীব মানুষ তারা চিকিৎসা নিতে পারবে না। কারন, অনেক টাকা লাগবে। অথচ, এক সময় হোমিওপ্যাথিকে গরীবের চিকিৎসা ব্যবস্থা বলা হতো।
আরও পড়ুন: কাতিলা গাম খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নিন