ভালো থাকার মানে যদি আমরা বুঝতাম তবে চারদিকে এতো হট্টগোল, মারামারি, কাটাকাটি হয়তো হতো না। ভালো থাকার মানে কেবল নিজে ভালো থাকা নয়, চারপাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা। যে শুধু বলবে যে ভালো থাকা মানে শুধু নিজে ভালো থাকা সে আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছে।
ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো থাকতে চায়। শিক্ষক তার ছাত্রছাত্রীদের কাছে ভালো থাকতে চায়। সরকার জনগণের কাছে ভালো থাকতে চায় আবার জনগণ সরকারের কাছে ভালো থাকতে চায়। কিন্তু এই ভালো থাকতে চাওয়ার যে অবস্থা – সেটা যদি পরিবর্তন না হয়, সেটা যদি কখনোই পূর্ণতা না পায়, সেটা যদি কেবল মুখে মুখেই থাকে তবে কখনোই কেউ ভালো থাকতে পারবে না।
আমি একজন বেসরকারি চাকরীজীবি। আমি আমার বসের কাছে ভালো থাকতে চাই। কিন্তু আমার বস যদি নীতি বিরোধী কাজের চাপ আমায় দেয় তাহলে আমি তার কাছে কিভাবে ভালো থাকবো? ঐ অবস্থায় বসের কাছে আমার কোনভাবেই ভালো থাকা সম্ভব নয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন হচ্ছে। লাখো শিক্ষার্থী আন্দোলনটা কিন্তু অযৌক্তিকভাবে করছে না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কিছু যৌক্তিক দিক আছে। এই যৌক্তিক দিকগুলো সরকারের বিবেচনা করা উচিত। তারপর সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবীরা আজ ভালো থাকতে পারতো। তারা জীবন দিয়ে দিচ্ছে তবুও তারা তাদের আশার বানী শুনতে পাচ্ছে না, তাহলে তারা কিভাবে ভালো থাকবে।
একটা শিশু কেবল তার মা-বাবার কাছেই ভালো কিছু প্রত্যাশা করে। একজন সাধারন মানুষ তার গ্রামের সবার কাছে ভালো থাকার প্রত্যাশা করে। সামগ্রিকভাবে কোন আন্দোলন যখন হয় তখন তারা সবাই সরকারের কাছে ভালো থাকার জন্য লড়াই করে।
লড়াই করতে হয়। জীবনের সবগুলো সিড়িতেই লড়াই করতে হয়। তা না হলে অনেক কিছুই কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আপনি যদি সবসময় চুপ করে থাকেন তাহলে আপনার উপরেই শেষমেষ দোষটা চাপানো হবে। এখানকার মানুষগুলো ভালো নয়। সবাই শুধু নিজে ভালো থাকতে চায়, কেউ অন্যকে নিয়ে ভালো থাকতে চায় না।
খুব গভীরভাবে যদি চিন্তা করা যায় তাহলে বলা যায়, একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীর মনের অবস্থা সময়ের তালে তালে বুঝতে না পারে তাহলে সে তার স্বামীকে কোনভাবেই ভালো রাখতে পারলো না। আমি ভালো নেই – এই কথা কয়জন স্বামী তার স্ত্রীকে মুখ ফুটে বলে? বললেও খুব কম মানুষই বলে।
ঠিক একইভাবে স্বামী যদি তার স্ত্রীর মনের গভীরের কথাগুলো বুঝতে না পারে, কষ্টের সময়গুলো বুঝতে না পারে তাহলে সেই স্বামী ব্যর্থ। কোনভাবেই তার স্ত্রীকে ভালো রাখতে পারলো না। আর স্ত্রীকে ভালো না রেখে সে নিজেই কিভাবে ভালো থাকলো! এই ভালো থাকার কোন মানে আমি খুুঁজে পাই না।
শেষ কথা হিসেবে বলতে চাই, ভালো থাকা মানে নিজে ভালো থাকা নয়। পাশের মানুষটাকেও ভালো রাখতে হবে। ঐ যে বললাম, সরকারের উচিত জনগণের দিকটা বিবেচনা করা আবার জনগণের উচিত সরকারের দিকটা বিবেচনা করা।
তবে বেশিরভাগ দায়িত্বটা সরকারের হাতেই। কারন, প্রশাসন ক্ষমতাবলে সরকার ইচ্ছে করলেই যে কোন অরাজকতা মুহূর্তেই দূর করতে পারে। আর অন্যান্য সেক্টরেও যথেষ্ট লোকবল রয়েছে জনগণের বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য। সুতরাং জনগণের ভালো থাকাটা মূলত সরকারের উপরেই নির্ভর করে।