সোরিয়াসিস খুব কমন একটা চর্ম রোগ। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছরের ২৯ অক্টোবর সোরিয়াসিস দিবস পালন করা হয়। এই রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। কিছু থেরাপী দেয়া যায় যা অনেক ব্যয়বহুল। সাধারন মানুষের পক্ষে সেই চিকিৎসা নেয়া সম্ভব নয়।
তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বিষয় শেয়ার করবো। কারন, আমি নিজেও এই রোগে আক্রান্ত। আমি এখনও টেস্ট করিনি কিন্তু লক্ষণ দেখে বুঝে গেছি যে – সত্যিই আমি হয়তো সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগে আক্রান্ত। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি বেশ সুস্থ। বহুদিন থেকে বেশ সুস্থ আছি। স্বাভাবিক ওষুধের পাশাপাশি আমি কিছু নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি। আপনারা এই নিয়মগুলো মেনে চললে আশা করি আপনাদেরও অনেক উপকার হবে। রোগটা হয়তো নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে, এই রোগ নির্মূল করা যায় না। তবে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। কঠোরভা মেনে চলতে হবে। কারন, নিয়ম না মানলে আপনি কখনোই সুস্থ থাকতে পারবেন না।
আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলবো। শুরুতেই যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো আপনি লাল মাংস কম খাবেন। কয়েক মাস যদি একেবারেই না খান তবেই সবচেয়ে ভালো হয়। বিশেষ করে গরু, মহিষ, হাস এবং খাসির মাংস। প্রয়োজনে আপনি মুরগীর মাংস খেতে পারেন। মুরগীর মাংস খেলে সাধারনত এলার্জি হয় না।
ঘুম থেকে প্রতিদিন ভোরবেলা উঠবেন এবং তারপর খালি পায়ে বাইরে হাটাহাটি করবেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। ডায়াবেটিস একটি আলাদা ব্যাধি আর তাই সেটা নিয়ে আজকে এখানে কোন কিছু বলবো না। আজ শুধু সোরিয়াসিস নিয়েই কথা বলবো।
টাইমলী আপনাকে খাবার খেতে হবে। সকালে নাস্তা, দুপুরে সবজি ভাত এবং রাতে রুটি অথবা সবজি ভাত। ছোট মাছ, ডিম এগুলো নিশ্চিন্তে খাবেন এবং প্রয়োজনে প্রতিদিন খাবেন। ওগুলো খেলে কোন সমস্যা নেই বরং আপনার শরীর স্বাস্থ্যবান থাকবে।
সকাল বেলা অবশ্যই একটু ব্যায়াম করবেন। সম্ভব না হলেও একটু হাটাহাটি অবশ্যই করবেন। অবশ্য যারা অনেক রাত্রে ঘুমান তাদের জন্য সকালে উঠে এসব করাটা বেশ কষ্টসাধ্য। তারপরেও চেষ্টা করবেন। রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বেন। আমি সুপারিশ করবো এশার নামাজ পড়ার পর ঘুমিয়ে পড়লে ভালো, সম্ভব না হলে অন্তত ১১ টার মধ্যে ঘুমাতে যাবেন। আর ১২ টার মধ্যে অবশ্যই যাবেন। এটা হলো সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এলার্মিং টাইম।
টেনশন মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের জীবনে সমস্যা থাকবেই আর মানুষ টেনশন করবেই। কিন্তু আপনি যতোটা সম্ভব টেনশন থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। কারন, টেনশন করলে রোগটি বেড়ে যায়। এই রোগের জন্য টেনশন খুব খারাপ জিনিস।
শরীর যদি খুব বেশি পরিমাণে আক্রান্ত থাকে তবে আপনাকে আমি একটা ইঞ্জেকশন সাজেস্ট করবো। সেটা হলো ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীর। ট্রায়ালন (Trialon 40mg/ml) মাত্র ৭৫ টাকা দাম। এটা আপনি প্রতি সপ্তাহে একটি করে অন্তত ৫ সপ্তাহ কন্টিনিউ করবেন। তাহলে এই ৫ সপ্তাহের মধ্যে আপনার রোগ সেরে যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন, এই সেরে যাওয়া সেই সেরে যাওয়া নয়। এটাকে বলা যেতে পারে দমিয়ে রাখা। অর্থাৎ একটি স্টার্ট করা আছে এমন গাড়িকে আপনি সামনে থেকে ব্লক করে রাখছেন, সুযোগ পেলেই সেই গাড়ি আপনাকে ক্রস করে চলে যাবে।
এই ইঞ্জেকশন দিলে আপনার শরীরে চুলকানিও থাকবে না। তারপরেও বেশি চুলকানি থাকলে হেল্থকেয়ার কোম্পানীর Tablet. Alcet 5mg প্রতিদিন রাতে একটি করে সেবন করবেন। এই ওষুধ খেলে কিন্তু আপনার ঘুম একটু বেশি হবে। সেটা মাথায় রেখেই খাবেন। প্রয়োজনে সময় মতো ঘুম থেকে উঠার জন্য ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখবেন।
টেনশন ফ্রি থাকার জন্য আপনার হাতের মোবাইল ফোনটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। যেগুলো আপনার ভালো লাগে তা শুনবেন। ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় শুনতে পারেন। এতে মনও ভালো থাকবে। তবে অবশ্যই খারাপ কিছু হতে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।
নিম পাতা ব্যবহার করবেন। বিশেষ করে গোসলের সময় অবশ্যই। নিম পাতা সত্যিই অনেক উপকারী। আর যদি নিম পাতা না পান তাহলে স্কয়ার কোম্পানীর সেলেক্ট প্লাস নামক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এটাও বেশ ভালো কাজে দেয়। সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন ব্যবহার করবেন অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন।
মাথা থেকে পা পর্যন্ত অবশ্যই অলিভ ওয়েল ব্যবহার করবেন। ওলিভ ওয়েল ব্যবহার করলে আপনার শরীর সতেজ থাকবে। শরীর শুষ্কতা থেকে রক্ষা পাবে। আর বাইরের দিক থেকে শরীরকে প্রোটেকশন দেয়ার জন্য জিস্কা কোম্পানীর ক্লোসালিক (Closalic Ointment 10gm, 30gm) ওয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করবেন। ১০ গ্রাম বা ৩০ গ্রাম যেকোনটা নিতে পারেন। এটা ব্যবহার করলেও খুব উপকার পাবেন। তবে আমার অনুরোধ থাকবে অবশ্যই জিস্কা কোম্পানীর ক্লোসালিক ওয়েন্টমেন্ট-ই ব্যবহার করবেন।
আশা করি, উপরের বিষয়বস্তু বুঝতে পেরেছেন। সম্ভব হলে হোমিও চিকিৎসা নিবেন। হোমিওপ্যাথিতে সালফার, মেজেরিয়াম সহ বেশ কয়েকটি ওষুধ খুব ভালো কাজ করে। তবে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অন্তত ৩ মাস ওষুধ সেবন করবেন। কোন সহযোগিতা লাগলে আমাকে ফোন দিতে পারেন। আমার ফোন নম্বর হলো: +8809638990654. এটা আমার ব্রিলিয়ান্ট নম্বর। সম্ভব হলে শুরুতে একটি এসএমএস করবেন। তারপর আমার সাথে কথা বলবেন।
যাই হোক, সবাই ভালো থাকবেন। আর যথাসম্ভব নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি নিয়ম-কানুন বাদ দিয়ে সুস্থ হতে চান তবে এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর যে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিবেন তার সম্পর্কে একটু যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করবেন। কমার্শিয়াল ডাক্তারের কাছে না যাওয়াই ভালো। যারা গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে তাদের কাছে চিকিৎসা না নেয়াই ভালো। টাকা খরচ করার আগে অবশ্যই একটু ভেবে খরচ করবেন। আশা করি, সুস্থতাও ফিরে পাবেন আর আপনার টাকা পয়সার অপচয়ও হবে না। আর সব বিষয়ে সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখবেন।
আরও পড়ুন: মার্কেটিং চাকরি আসলে কাদের জন্য!