অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে এখন টুকটাক সবাই জানি। অনলাইনে যে সত্যিই ইনকাম করা যায় এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে অনলাইন থেকে ইনকাম করাটা বেশ কঠিন। অনেক ধৈর্য ধরতে হয়। অনেক পরিশ্রম করতে হয়, লেগে থাকতে হয়। তবেই অনলাইন থেকে সত্যিকারের ইনকাম করা যায়।
আমার একটু প্রিভিয়াস হিস্টরী শুনেন। ইন্টার পাশ করেছি ২০১৩ সালে। তারপর আর কোচিং করা হয়নি। তবে বেশ কিছু বই কিনেছিলাম। বাড়িতে পড়েই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। তখন পরিবার থেকে আমাকে বলা হলো – দ্রুত কম্পিউটার শিখতে হবে, তারপর ঢাকায় আসতে হবে, চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে হবে।
সত্য কথা হলো তখন আমাদের পরিবার বেশ অসচ্ছল ছিল। আমি মনে মনে ভাবলাম, কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করবো আর পাশাপাশি পড়াশোনা করতে পারবো, খারাপ কি! অফারটা তো ভালোই। আমি দ্রুত কম্পিউটার শেখা শুরু করলাম। দেবীগঞ্জে শিখেছি। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ছিলেন রেজানুর উল্লাহ। আমি সন্ধ্যা বেলা যেতাম আর সারারাত প্রাকটিস করতাম। সকালে চলে আসতাম। উনি খুব যত্ন সহকারে আমাকে শিখিয়েছেন। তার কাছে আমি সারাজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ। বর্তমানে দেবীগঞ্জে উনার একটি কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে যা সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
৩ মাসে ব্যাসিক কম্পিউটারের প্রায় সবকিছুই শিখেছিলাম। তারপর আমি, মা আর ছোট বোন একসাথে ঢাকায় চলে আসলাম। যে চাচা আমাকে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নিয়ে দেবে তার কোন খবর নেই। সে এই ব্যাপারে আমাকে কোন সহযোগিতা করেনি। তখন আমি বেশ বিপদে পড়ে যাই। ঢাকা শহরে তো আর কেউ এমনি এমনি খাওয়ায় না। আর চাকরি ছাড়া কতোদিন বেকার থাকবো!
এরপর কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি খোঁজা শুরু করি। সেই চাকরিও পাচ্ছিলাম না। বোনটারও চাকরি হয় না। অর্থাৎ নিজের কোন লোক যদি গার্মেন্টস এ চাকরি করে তাহলে চাকরি বেশ দ্রুতই হয়। কিন্তু আমার গ্রামের অনেক লোক চাকরি করা স্বত্ত্বেও আমার চাকরি হচ্ছিল না।
এভাবে প্রায় ১ মাস কেটে যায়। হঠাৎ একদিন দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সাথে দেখা। উনি আমাকে দেখে তো পুরাই অবাক। আমি সব ঘটনা খুলে বললাম। উনি বললো, তোমার চাকরির অভাব? কালকেই তোমার চাকরি হয়ে যাবে। বাইপেল পার হয়ে যে ইপিজেড সেই ইপিজেডে আমি চাকরি খুঁজছিলাম। আমি কথাগুলো কেন বলছি তার পেছনে অনেক কারন আছে। ধৈর্য ধরে পড়তে থাকুন – অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
তো পরের দিন আমার চাকরি সত্যি সত্যিই হয়ে যায়। মাঝখানে আরও ঘটনা ছিল কিন্তু সেগুলো স্কিপ করলাম। আমি কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি পেয়ে গেলাম। ২০১৩ সালে আমার বেতন তখন ১২ হাজার টাকার মতো। সেই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে সুন্দর জীবন ধারণ করা সম্ভব ছিল। এখন অবশ্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েও ভালো মতো চলা যায় না।
গার্মেন্টস এর এই চাকরি করতে গিয়ে আমি যেন আর কিছুই করতে পারছিলাম না। পড়াশোনা করা তো ইমপসিবল ছিল। ভোর ৫ টায় উঠে গোসল করে রেডি হয়ে খাওয়া দাওয়া করে বের হতাম। প্রায় ৫ কিলোমিটার হেটে এসে মেইনরোডে উঠতাম। তারপর আবার গাড়িতে করে গার্মেন্টস এ পৌছতাম। আবার বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টা বেজে যেত। সারাদিনের পরিশ্রমের শরীর। খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম খুব তাড়াতাড়ি। কারন, সকালে আবার উঠতে হবে। তখন আমার হাতে কোন স্মার্ট ফোন ছিল না।
আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে ঢাকা শহরে পাড়ি জমিয়েছিলাম সেই উদ্দেশ্য আমার সফল হয়নি। আমি যা করতে চাইনি তাই যেন আমি করছিলাম। এই চাকরি আমার ভালো লাগছিল না। একাকীত্ববোধ করতাম। নিজের মনকে বোঝাতে পারতাম না।
কম্পিউটারের প্রতি আমার এতো ঝোঁক ছিল যে আমার চাচার কম্পিউটার ছিল আর তা টিপাটিপি করার জন্য ৩ কিলোমিটার হেঁটে যেতাম। তারপর কোনরকম মাইক্রোসফ্ট অফিস প্রাকটিস করে আবার চলে আসতাম। খুব কষ্ট হতো আমার অথচ প্রতি শুক্রবার আমি এমন করতাম।
এভাবে আমি প্রায় ৪ মাস চাকরি করেছি। তারপর আর কন্টিনিউ করিনি। গোপনে চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি আর যাইনি। আমার সেই দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের স্ত্রী আমাকে চাকরিটা নিয়ে দিয়েছিল কিন্তু আমি উনাকেও বলে আসিনি। উনিও খুব মনঃক্ষুণ্য হয়েছেন। আমি আসলে উনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
তারপর কি করি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। ওহ – আরেকটি ঘটনা শেয়ার করি। আমার তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গার্মেন্টস এ চাকরি নেয়ার পরে আমি সেই চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। কারন, সেটা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আমি কোন প্রস্তুতিই নিতে পারিনি।
তখন আমি অনার্সে কোন একটা কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা করলাম। আমার পাশেই ছিল ধামরাই সরকারি কলেজ। আমি মূলত থাকতাম পল্লী বিদ্যুৎ মেইন রোড থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে মাজার এলাকায়। কোন এক শুক্রবার আমি একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ধামরাই সরকারি কলেজের জন্য একটি ফরম উঠাই। তারপর কম্পিউটার অপারেটরক বললাম এটা এখন কি করবো? উনি আমাকে বললেন যে, পরীক্ষার দিন যেন আমি এটা সাথে নেই।
ওটার ব্যাপারে আমার কয়েকজন বন্ধু আর এক বড়ভাইকে জিজ্ঞেস করি কিন্তু তারাও একই কথা বলে। কলেজে যে আগে জমা দিয়ে হয় তা আমার বোধগম্যের বাইরে ছিল। আমি সেই ফরম বাসায় রেখে দিলাম এবং পরীক্ষার দিন (শুক্রবার) সেটা নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম। তখনকার দিনে একসাথেই পুরো বাংলাদেশে অনার্স ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা নেয়া হতো।
আমি কলেজে যাওয়ার পরে গেটের বাইরে রয়ে গেলাম। কারন, আমার সিট ছিল একদম লাস্ট। অর্থাৎ আমার পরে আর কেউ ফরম উঠায়নি। কিন্তু আমি তো আর টাকা আর কাগজ জমা দেইনি। আর তাই আমার পরীক্ষা নেয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব। আমি ঐ কলেজের অধ্যক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট ছিল। তাই তাদের পক্ষেও আসলে করার কিছু ছিল না। পরীক্ষা আর দিতে পারলাম না। ফিরে এলাম নীড়ে। বাসার কাউকে এই ঘটনা খুলে বলিনি। খুলে বললে আমার মা অনেক কষ্ট পেতো।
আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, আমি যখন চাকরি ছেড়ে দেই তখন তো বেকার হয়ে পড়েছিলাম। ইজ্জত বাঁচানোর জন্য আমি রাজমিস্ত্রির কাজে গেছি এবং সারাদিনে ২৫০ টাকা ইনকাম করেছি। জীবনে একদিন মাত্র এই কাজ করেছি। যার আন্ডারে রাজমিস্ত্রির কাজ করেছিলাম তিনি একটু আধটু ভুলের জন্য আমাকে অনেক কথা বলেছিলেন সেদিন। কিন্তু যখন জানতে পেরেছেন আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছি তখন অনেক ভালো ব্যবহার করেছেন। আমি উনাকে সারাজীবন মনে রাখবো।
তারপর আর কি করার! বাসায়-ই রয়ে গেলাম। ছোট বোনটা চাকরি করছিল আর তার টাকা দিয়েই আমাদের ঢাকা শহরে সংসার চলছিল। এরপরে ঘটে গেল আরেকটি অঘটন। আমি পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে অনলাইনে আবেদন করে ফেলি। সেটা হলো বাংলালিংক নেটওয়ার্কিং এ চাকরি। বিকাশে তাদেরকে ৪৫০০ টাকা পাঠিয়েছিলাম-ও। প্রকৃত অর্থে এই চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো ছিল ভুয়া এবং এখন পর্যন্ত ভুয়া।
তারপরেও এই বিজ্ঞাপনগুলো পত্রিকায় কিভাবে প্রিন্ট হয় সেটা আমি বুঝি না। হাজার হাজার তরুণ প্রতিনিয়ত এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ওরা আমার কাছ থেকে শুধু টাকা নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং আমাকে আমার জেলা পঞ্চগড় পর্যন্ত নিয়ে গেছে। যখন দেবীগঞ্জ পার হয়ে লক্ষ্মীরহাটে পৌছেছি তখন তারা আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আসলে তখন এই চাকরিগুলো সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিলো না। ছিলাম বেকার তাই হুজুগে সামনে যা পেয়েছি তাই করার চেষ্টা করেছি।
তারপর গ্রামের বাড়ি থেকে আমার বড় ভাই ঢাকায় এসেছিল। তিনি সিদ্ধান্ত দিলেন যে, আমি আবার গ্রামে চলে যাই এবং সেখানেই কিছু একটা করি। সত্যিই তাই, কিছুদিন পরে আমরা সবাই আবার গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম। সেখানে আমি একটি কম্পিউটারের দোকান দিলাম। তখন সেখানে মেমোরী লোড, ফটোকপি, প্রিন্ট, ইন্টারনেট সেবা এবং আরও টুকিটাকি কাজ করতাম। কোন মতে দিন চলতো আমার।
আর পড়াশোনা! গ্রামের বাড়িতে পৌছার পর কয়েকদিন পরে জানতে পারি, ডিগ্রিতে তখনও আবেদন করা যাবে এবং ভর্তি হওয়া যাবে। তাই কিছু না ভেবেই ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে গেলাম। পড়াশোনাটা কোনরকমে চলতে লাগলো আরকি!
এর কিছুদিন পরেই আমি বিয়ে করে ফেলি। আসলে বিয়েটা আমি ইচ্ছে করে করিনি, বাসা থেকে চাপ দিচ্ছিল। পরে সবকিছু বিবেচনা করে আমি বিয়েতে মত দেই এবং বিয়ে করি। কম্পিউটারের দোকানটা দুজন মিলে করতাম অর্থাৎ আমার আরেকজন পার্টনার ছিল। ওনার নাম হলো ওসমান। উনি সত্যিকার অর্থেই খুব ভালো মানুষ। উনার ফ্যামিলির সবাই খুব ভালো মানুষ।
কিন্তু ব্যবসাটা একসাথে আর করা হয়ে উঠেনি। কিছু ব্যাপার নিয়ে দুজনার মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা আলাদা হয়ে যাই এবং আমি আলাদা দোকান দেই। আর এখান থেকেই মূল গল্পটা শুরু।
আমি যখন আলাদা দোকান দেই তখন ওয়াইফাই সংযোগ নেই। আর আমার হাতে ছিল সিম্ফনি ব্রান্ডের একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। অবশ্য ফোনটার ক্যামেরা জোস ছিল। সেই ক্যামেরা দিয়ে আমি ফানি ভিডিও তৈরী করা শুরু করি। এলাকার ছেলে-মেয়েদের সহযোগিতা নেই। তখন ইউটিউবে মনেটাইজেশনের জন্য কোন নিয়ম ছিল না। চ্যানেল তৈরী করে ভিডিও আপলোড দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মনেটাইজেশন অন করা যেত।
তখন আমার একটু একটু আয় হচ্ছিল। সেটা আসলে খুবই কম। ধরে নিতে পারেন যে, ১ ডলার হতে আমার ১৫ দিন সময় লাগতো। মানে মাসে মাত্র ২ ডলার। তো কিছুদিন পরে ইউটিউব তাদের রুলস এ পরিবর্তন নিয়ে আসলো যেখানে বলা ছিল অন্তত ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার লাগবে এবং ১০ হাজার ভিউস লাগবে চ্যানেল মনেটাইজেশন করার জন্য। আমার চ্যানেলে তখন এই শর্তগুলো পূরণ ছিলো না। পরে একটু ভালোভাবে কাজ করে কিছুদিনের মধ্যেই সেই শর্ত পূরণ করে ফেলি।
তখন বেশ আয় হচ্ছিল। মাসে অন্তত ৪০ ডলার। ৩ মাস পরে আমি ১০০ ডলার উইথড্র দেই। তারপর আবার বিভিন্ন ধরণের ভিডিও তৈরী করা শুরু করি। কিন্তু আমার কোন সাপোর্ট ছিল না। ডুয়েল কোর কম্পিউটার দিয়ে কাজগুলো করতাম। ক্যামতেসিয়া ভিডিও ইডিটিং সফ্টওয়ার কোন রকমে চলতো। আমার কোন এইচডি ক্যামেরা ছিলো না।
তখন ইউটিউবের রুলস এন্ড রেজুলেশন তেমনভাবে আমি জানতাম না। তেমন চেষ্টাও করিনি জানার জন্য। কিছুদিন পরে আমি ইন্ডিয়ান কয়েকটি চ্যানেলের মুভি ডাউনলোড করে আমার চ্যানেলে আপলোড দেই। আপলোড দেয়ার সাত দিনের মাথায় আমার চ্যানেলে স্ট্রাইক আসে এবং চ্যানেল গায়েব হয়ে যায়। সেই চ্যানেলের নাম ছিল Azgar620.
তখন আমি অনেক ভেঙে পড়ি। দোকানটাও তেমন ভালো চলছিল না। ফ্রিল্যান্সিং বলতে কেবল ইউটিউবকেই বুঝতাম। আমি যখন ইউটিউবে কাজ শুরু করেছিলাম তখন বাংলাদেশের বর্তমান টেক ইউটিউবার সোহাগ৩৬০ চ্যানেলে মাত্র ১০ হাজার সাবস্ক্রাইব ছিল। আমার চ্যানেল গায়েব হওয়ার আগে আগে ১২ হাজার সাবস্ক্রাইবার ছিল।
যাই হোক, এরপর আইটি বাড়ি থেকে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর কোর্স নিয়েছিলাম। তারা তখন ডিভিডি বিক্রি করতো। এখন করে কিনা জানি না। সেটাও বেশ কিছুদিন শিখেছিলাম। তারপর হাল ছেড়ে দেই। আসলে পারিবারিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারনে মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। সাপোর্ট না থাকলে যা হয় আরকি।
এরপর কয়েক বছরে অনেক কিছু ঘটে গেছে। সেগুলো আর বলছি না। বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। মাঝখানে আমার হাইস্কুলে (যে স্কুলে আমি পড়াশোনা করেছি) ল্যাব সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। কোন নিয়োগ নয়, তবে স্যার’রা আমাকে ল্যাব সহকারী হিসেবে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে সেটার আর নিয়োগ হয়নি।
এতো কিছু হয়ে গেছে কিন্তু আমি কম্পিউটার থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারিনি। আমার ইচ্ছে খুব ছিল। এখনও আছে। এরপর আমি ২০২১ সালের শেষের দিকে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে জয়েন করি। সেখানেই এখন পর্যন্ত কাজ করছি।
তবে সেই চাকরির পাশাপাশি আমি বহুব্রীহি হতে ফুল স্ট্যাক ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স এবং টেন মিনিট স্কুল হতে ইমেইল মার্কেটিং কোর্স সম্পন্ন করি। এই korotoya.com হচ্ছে আমার ওয়েবসাইট। এটাই আমার পরিচিতি। Korotoya নামক ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যেটাতে মনেটাইজেশন এনাবল করা আছে। আমি ভবিষ্যতে একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হতে চাই। আমার স্বপ্নকে আমি বাস্তবায়ন করবোই ইনশাআল্লাহ।
ইমেইল মার্কেটিং-এ আমি মূলত মেইলচিম্প এবং ক্ল্যাভিয়ো সম্পর্কে শিখেছি। আর ফুল স্ট্যাক ডিজিটাল মার্কেটিং-এ প্রায় সবকিছুই শিখেছি। তবে এসব অনেক ধৈর্যের ব্যাপার এবং নিয়মিত প্র্যাকটিসের ব্যাপার। প্র্যাকটিস ছাড়া এসব মনে রাখা কঠিন। আর এসব তো কিছুদিন পরপর আপডেট হয়। সেই আপডেট সম্পর্কে না জানলেও সমস্যা।
আমি যদি এই চাকরি না করতাম আর ফুল টাইম ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতাম তবে হয়তো আজ আমি একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তাম। কিন্তু এখনও তা হয়ে উঠেনি। তবে হবে ইনশাআল্লাহ।
মূল কথায় আসি, অনলাইনে যারা ইনকাম করতে চান তারা যদি টাকার কথা মাথায় রেখে শিখতে থাকেন তাহলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। কারন, যখনই আপনি ইনকাম করতে পারবেন না তখনই আপনার মন ভেঙে যাবে। তাই কোন ধরণের টাকার চিন্তা বা ডলারের চিন্তা না করে ভালোভাবে শিখুন। নির্দিষ্ট একটি বিষয় ভালো করে শিখুন। সেটা হতে পারে ডিজিটাল মার্কেটিং এর যেকোন একটি বিষয়, হতে পারে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ফেইসবু মার্কেটিং সহ ইত্যাদি।
অর্থাৎ একটি বিষয় খুব ভালোভাবে শিখুন। তারপর প্রচুর পরিমাণে প্র্যাকটিস করুন। নিয়মিত আপডেটগুলো সম্পর্কে জানুন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলুন। সেরা কোন প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনে ভর্তি হন। তাহলেই আপনি সাকসেস হতে পারবেন।
আমার তো পুরো গল্পটি পড়েছেন। মোটামুটি যতোটা পারি শেয়ার করেছি। আমি এখন পর্যন্ত সাকসেস না হওয়ার জন্য আমি নিজে দায়ী, আমার পরিবার দায়ী। আমি নিজে দায়ী বলতে আমি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। এক জায়গায় স্থির থাকতে থাকতে পারিনি। আমাকে কেউ গাইডলাইন দেয়নি। আমি কোন উপযুক্ত মেন্টরের সান্নিধ্য পাইনি। এগুলোকে অজুহাত বলেন আর যাই বলেন এসব আমার ক্ষেত্রে সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
এখন আপনি যদি এই সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন, নিজের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন, কষ্ট করতে পারেন, নিজ সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারেন তাহলে আপনার সফল হওয়ার ব্যাপারটিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আপনি সফল হবেন-ই-হবেন।
তবে ভাই খুব কঠিন। অনলাইনে ভালো কিছু করা খুব কঠিন। ধৈর্য থাকে না আর পরিবার যদি সাপোর্ট না দেয় তাহলে তো আপনি হয়ে যাবেন নিঃশ্ব। সুতরাং জীবনে যতো বাধা বিপত্তি আসুক না কেন নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকুন – কেউ আপনাকে থামাতে পারবে না।
সময়ের পরিবর্তনে সবকিছু পরিবর্তন হবেই। আপনি না চাইলেও হবে। কিন্তু মানুষ এমন যে, বয়সের সাথে সাথে তার অনেক ভালো লাগাই পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই কম বয়স থেকেই শুরু করুন। আশা করি, আপনি বিফলে পর্যবসিত হবেন না।
আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি একজন প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হতে পারি। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারাও শুরু করুন এবং লেগে থাকুন। সবার জীবনে পূর্ণতা আসুক, আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক – এই কামনায় ইতি টানলাম।
আরও পড়ুন: ভালো থাকার মানে বলতে আমরা কি বুঝি