একটা ভুল সিদ্ধান্ত জীবনের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। সিদ্ধান্ত নিতে হলে বার বার ভাবা উচিত। একটা সিদ্ধান্ত যেমন জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে আবার জীবনকে শেষও করে দিতে পারে। আজ আমার বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ভুল সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। এখান থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারবেন।
আমি তখন ইন্টার পাশ করেছি। ডিগ্রি কলেজে বিএসএস গ্রুপে ভর্তি হয়েছি। সামনে ছিল ২য় বর্ষের পরীক্ষা। আমার বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট বাজারে আমার একটি কম্পিউটারের দোকান ছিল। কম্পিউটার বিক্রি করতাম এমন নয়। কম্পিউটার সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করতাম যেমন প্রিন্টিং, স্ক্যান, অনলাইনে ভর্তি, ছবি তোলা ইত্যাদি। মোবাইলের মেমোরী লোডও করতাম। দিন কোন রকমে যাচ্ছিল আরকি। তখন আমি বিয়ে করেছি এবং আমার একটা মেয়ে ছিল।
আমি ইউটিউবে কাজ করতাম। মোবাইল দিয়ে ফানি ভিডিও তৈরী করতাম। হালকা পাতলা কিছু আয় হতো। ইউটিউবের সুবাদে আমার সাথে একজন মাদরাসা শিক্ষকের পরিচয় হয়। উনাকে আমাদের বাসায়ও নিয়ে এসেছিলাম। আমার বাসা থেকে উনার বাসার দূরত্ব ছিল প্রায় ৩ কিলোমিটার। তিনি দিনাজপুরে একটি মাদরাসা পরিচালনা করতেন। উনারও একটি ইউটিউব চ্যানেল ছিল। তিনি সেটার কারিগরী সহায়তা আমার থেকে নিচ্ছিলেন। আমি যতোটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি।
তো এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পরে তিনি আমার সম্পর্কে, আমার পরিবার সম্পর্কে বেশ ভালোই জানলেন। হঠাৎ আমাকে একটি প্রস্তাব দিলেন। উনি বললেন যে, দিনাজপুরে ঘাসি পাড়ায় একটি প্রেস রয়েছে যেখানে লোক লাগবে। বেতন ১২ হাজার টাকা এবং থাকা খাওয়া নিজের। আমার কাছে ভালোই মনে হলো। প্রেস-এ থাকলে আমি বেশ ভালোভাবে ডিজাইনের কাজও শিখতে পারবো যা ভবিষ্যতে আমার কাজে লাগবে। আসলে এটা ছিল আমার চরম একটা ভুল সিদ্ধান্ত। কেন চরম ভুল সিদ্ধান্ত বলছি তা বুঝতে পারবেন, পড়তে থাকুন।
উনার কাছে এসব শুনে আমার পরিবারকে আমি জানালাম। তারাও কেমন যেন কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই আমাকে পাঠানোর জন্য রাজি হয়ে গেলেন। তারপর আমার দোকানটা বিক্রি করে দিলাম আরেকজনের কাছে। শুধু কম্পিউটার’টা আমার কাছে রাখলাম। বাকি সবকিছু অল্প কিছু টাকায় গ্রামেরই আরেকজন ভাই নিয়ে নিলেন। তিনি এখনও দোকান করছেন সেখানে। আমি কয়েকদিন পরে বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং আমার কম্পিউটার নিয়ে চলে গেলাম দিনাজপুর। সেখানে যাওয়ার পরে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাস থেকে নামলাম। তারপর ওই মাদরাসা শিক্ষক’কে ফোন করি। উনি কলও ধরে না। সেই সময় আবার বৃষ্টি শুরু হলো। প্রায় ৩০ মিনিট পরে উনি কল ধরলেন এবং আরো কিছু সময় পরে আমার কাছে আসলেন। তারপর সেই প্রেস এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। প্রেস এ গিয়েই প্রেস মালিককে দেখে আমার ভালো লাগলো না। উনি নিজেকে কি মনে করতেন তা একমাত্র আল্লাহই জানে। আমি একজন নতুন মানুষ। আমি গিয়েছি – কিন্তু উনি আমার সাথে কোন কথাই বললেন না। এই মাদরাসা শিক্ষকও আসলে ওইভাবে কোন আলোচনাই করেননি। আমাকে উনার প্রেস-এ পৌছে দিয়ে প্রেস মালিকের সাথে কয়েকটি কথা বলে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। এদিকে আমি সেই সকাল ১০ টার পর থেকে না খাওয়া।
আমার নাই কোন থাকার ব্যবস্থা। একটু টয়লেট বা ওয়াশরুমে যাবো সেটারও ব্যবস্থা নাই। আমার টোপলা-টাপলি নিয়ে সেই দোকানেই বিকাল ৫টা পর্যন্ত বসে থাকলাম। তারপর প্রেস মালিক একটা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই বাসায় আমি সবকিছু নিয়ে উঠলাম। কোন পরিবেশ নেই, খুব কষ্টের জায়গা। আমি আপনাদের আসলে লিখে সেই কষ্টগুলো বোঝাতে পারবো না। আমার পকেটে তেমন টাকাও ছিলো না। বাসা থেকে সম্ভবত মাত্র ৫০০ টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা গিয়ে গাড়ি ভাড়া দিয়েছি। বাসায় টাকাই ছিলো না, দিবে কোথা থেকে।
যাই হোক, আমার পেটে ভাত গেল রাত ১০ টার দিকে। তারপরেও রান্না বান্না (মেসের) তেমন ভালো নয়। কষ্ট করে খেয়েছি। মেসে যে রুমে থাকতাম সেই রুমে আরেকটা ভাই ছিল। সম্ভবত দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়তো। উনি বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসতো, মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বাইরের হোটেলে গিয়ে খাওয়া করতো। আমাকে প্রায়ই বলতো। আমি ওদের সাথে যেতে পারতাম না। কারন, আমার তো পকেট ফাকা ছিল। সেটা আমি তাদের বুঝতে দিতাম না। বিভিন্ন কথা-বার্তা বলে কাটিয়ে দিতাম।
শুক্রবার করে প্রেস বন্ধ থাকতো। বাকি ছয় দিনই প্রেস-এ কাজ চলতো। প্রেস-এ আরেকটা ভাই আসতো। উনিই মূলত ডিজাইনার। ভাইটা খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তার কোন অহংকার ছিলো না। বর্তমানে ঐ প্রেস-এ থাকেন না। নিজে দোকান দিয়েছেন। উনার নাম হলো রিয়াদ। দিনাজপুরে উনার বিসমিল্লাহ কম্পিউটার এন্ড গ্রাফিক্স নামে দোকান রয়েছে। উনার কাছে আমি শিখতাম। ছোট খাটো ডিজাইন করে দিতাম। বিভিন্ন লিখা লেখে দিতাম। দোকান গুছিয়ে রাখতাম। প্রতিদিন ঝাড়ু দিতাম। এইসব কাজ করতাম আরকি। প্রেস মালিক যাতে সন্তুষ্ট থাকে সেই চেষ্টা করতাম। এভাবে প্রায় ১ মাস হয়ে গেল। তখন বেতন পাওয়ার সময় এলো। প্রেস মালিক আমায় মাত্র ৩ হাজার টাকা দিলেন। আমি তো পুরোটাই অবাক। আমি বললাম যে, এই টাকা দিয়ে আমি কি করবো! এটাতো আমার মেস ভাড়া দেয়ার টাকাও না। তখন উনি বলতেছে, উনি সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা আমাকে দিতে পারবে। এই টাকায় যদি আমি থাকি থাকবো, নইতো না। আমি তখন ওই মাদরাসা শিক্ষককে বিষয়টি জানাই। উনিও আমায় কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ওদিকে আমি যে বাসায় এসে আমার দোকানটা চালু করবো সেই বুদ্ধিও আর নেই। কারন, আমি তো সেটা বিক্রি করেই চলে গেছি। আমি বিক্রি করতে চাইনি। কিন্তু আমার বড় ভাই তার অভাবের তাড়নায় দোকানটা বিক্রি করতে আমায় বাধ্য করেছে।
তারপর আমি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কারন, বাসায় গেলেও সমস্যা। বাসায় তো আর করার মতো কিছু নেই। আর বাসা থেকেও টাকা চাচ্ছিল। জানেই যে, মাস শেষে আমি ১২ হাজার টাকা পাবো। হয়তো আমার খরচ হবে ৫ হাজার বা ৬ হাজার টাকা। বাকি ৬ হাজার টাকা আমি বাসায় পাঠাতে পারবো। একটা পরিবারে কতোটা সমস্যা থাকলে এমন চিন্তা তারা করতে পারে – ভেবে দেখুন।
আমি আমার বিষয়টা বাসায় জানাতে পারছিলাম না। কারন, তারা তখন আমার উপর অনেক দোষ চাপাতো। আমার স্ত্রীর কাছে বুদ্ধি চাইলাম। সেও কিছু বলতে পারলো না। আমার যা ইচ্ছে তাই করতে বলেছিল। সেই পরিস্থিতিতে আমি বড় একা হয়ে গিয়েছিলাম। ওদিকে, আমার শরীরে চর্ম রোগ ছিল। কোন ভালো ডাক্তার দেখিয়ে কোন চিকিৎসাই করতে পারিনি। সম্ভবত সোরিয়াসিস রোগ। টেনশন করলে সেই রোগ বাড়ে। এসব চিন্তায় এই রোগটাও বাড়ছিল। প্রেস থেকে আমাকে যে টাকা দিয়েছে সেই টাকা মেসে দিয়েছি, মেস ছাড়তে গেলে আরো টাকা দিয়ে ছাড়তে হবে। কি করবো, কোন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
তখন আমার এক বন্ধু আলী আকবর – তার কাছে কল দিলাম। তাকে সবকিছু খুলে বললাম। সে আমার কাছ থেকে সবকিছু শুনে আমাকে ৩৫০০ টাকা পাঠালো আর ঢাকায় আসতে বললো। তখন রমজান মাস চলছিল। এদিকে বাড়ি থেকে টাকা চাইতেছিল। আমার কাছে সিম্ফনি ব্রান্ডের একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছিল। তখন ওই ফোনটা ওই মাদরাসা শিক্ষকের কাছে বিক্রি করে দিলাম। সম্ভবত ৩ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। সেই টাকা বাসায় দিয়েছি আমার বেতনের কথা বলে। আপনারা বিশ্বাস করবেন না – আমার এখন চিৎকার দিয়ে কান্না পাচ্ছে। আমি খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিনগুলো পার করেছি।
তারপর আমার সমস্ত জিনিসপত্র বিশেষ করে কম্পিউটার ওই মাদরাসা শিক্ষকের বাসায় রেখে (দিনাজপুরে ওনার মাদরাসায়) আমি ঢাকায় আসার জন্য টিকেট কাটলাম। সারাদিন আমি না খাওয়া। সন্ধ্যার পরে শুধু ইফতারি করেছি। আর এসব ঘটনার কিছুই আমার পরিবার জানতো না। শুধু আমার স্ত্রী জানতো। ওর কাছে শেষ পর্যন্ত ৫০০ টাকা চেয়েছি। তবুও সে জোগাড় করে দিতে পারেনি। সে তখন তার বাবার বাড়িতে ছিল।
এরপর ভোর ৫ টায় আমি ঢাকায় পৌছলাম। কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে হাইওয়ে পুলিশ ফাড়িতে নামলাম। তারপর আমার বন্ধুটাকে কল দিলাম। সে এসে আমায় রিসিভ করে নিয়ে গেল। তারপর গিয়ে দেখি, একটা রুমের মধ্যে গাদাগাদি করে ৬/৭ জন থাকতে হয়। তারা সবাই পড়াশোনা করে। সেখানে আমার বন্ধুর বড় ভাইও ছিল। ওই বড় ভাইয়ের সাথে আমার আগে থেকেই সম্পর্কও ছিল। উনি পশু চিকিৎসায় পারদর্শী। আমাদের গ্রামে এসে একসময় চিকিৎসা করতেন, আর আমি উনার সাথে থাকতাম।
যাই হোক, আগেই বলেছি তখন রমজান মাস চলছিল। আমি খুবই ক্ষুধার্ত ছিলাম। আমার বন্ধুকে বলেছি আমি রোজা ছিলাম। সে আর আমাকে কিছু খেতে বলেনি। আমার শরীরেও রোগটা খুব বেড়ে গিয়েছিল। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে ইফতার করলাম। রাত ৯ টার সময় রাতের খাবার খেলাম। খাবার সীমিত যেহেতু সেটা একটা মেস ছিল। ওই ভাবে কষ্ট করেই খাচ্ছিলাম। আমার বন্ধু আমাকে রিক্সা চালানোর কথা বলে নিয়ে গিয়েছে। কিছুদিন রিক্সা চালানোর পর হয়তো কোন টিউশনির যদি ব্যবস্থা করতে পারে তখন টিউশনি করবো। তার কথায় আমি রাজি থেকেই এসেছি।
কিন্তু সেখানে যে বড় ভাইগুলো থাকতো তারা আমার বিষয়টিকে পজিটিভলি নেয়নি। তারা রিক্সা নিয়ে দিতে না করছিলো। যদি রিক্সা হারিয়ে যায় বা অন্য কোন সমস্যা হয় তখন সমস্ত চাপ আমার বন্ধুর ওপরে পড়বে এবং আরো কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে। যাই হোক, আমার বন্ধু দমে যায়নি। সে আমাকে পরের দিন (আমি যেদিন ঢাকায় এসেছি তার পরের দিন) একটা রিক্সা গ্যারেজে নিয়ে গেল এবং পরিচয় করিয়ে দিলো। রিক্সা গ্যারেজ মালিক আমাকে দেখেই বললো যে, উনি তো রিক্সা চালাতে পারবে না। তার শরীরে সমস্যা, এগুলো রোদে গেলে বেড়ে যাবে। উনার কথা কিন্তু ঠিক। রোদে গেলে আমার এই রোগ বেড়ে যায়। আর তখন শরীরের রোগটা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। একটা ক্রীম কেনার মতো টাকাও থাকতো না পকেটে।
তো তারপরেও বলে কয়ে আমার বন্ধুটা একটা রিক্সা নিল। নেয়ার পরে সে নিজেই রিক্সায় বসলো আর আমাকে চালাতে বললো। আমি তাকে ১০ মিনিটের মতো চালাইলাম। তারপর সে বললো যে, পারবা ইনশাআল্লাহ। এই বলে রিক্সা আমায় দিয়ে চলে গেল। কিন্তু আমি ওই ১০ মিনিট চালিয়েই খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি যেন আর পারছিলাম না। আমার দম বন্ধ আসছিল। আমি আমার বন্ধুটাকে বুঝতে দেইনি। তারপর আমি রিক্সা নিয়ে এক বিল্ডিংয়ের নিচে বসে আছি। ভাবছি, না – এটা আমার দ্বারা সম্ভব না। রোজা না থাকলে হয়তো পারতাম। পেটে তখন অনেক ক্ষুধা। তো হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বললো – মামা যাবেন? আমি হঠাৎ বলে ফেলেছি জ্বি যাবো। কোথায় যাবেন? উনি বললেন, শান্তি নগর। আমি বললাম যে, রাস্তা দেখিয়ে দিয়েন – আমি যেতে পারবো। আমি নতুন মানুষ, চিনি না। উনি উঠলেন আমার রিক্সায়। তারপর উনাকে খুব কষ্ট করে শান্তিনগর গিয়ে নামিয়ে দিলাম। রাস্তার সিগনালও ভালো করে বুঝতাম না। ভয়ে ভয়ে গিয়েছি। উনি আমাকে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়েছিল। তারপর রিক্সা নিয়ে ফিরে এলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আর সম্ভব না। এই রিক্সা আমি এখনই জমা দেব। যেই কথা সেই কাজ। গ্যারেজে রিক্সা জমা দিলাম। পকেট থেকে আরও ৫০ টাকা যোগ করে মোট ১০০ টাকা গ্যারেজ ভাড়া দিলাম।
এরপর আমার বন্ধুকে রাতে বললাম যে, তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছো। আর করতে হবে না। তুমি আমার যেভাবে পারো বাসায় পাঠিয়ে দাও। আমার খুব অসুস্থ। আমার পক্ষে আর এভাবে এখানে থাকা সম্ভব নয়। পরে সে আমায় বাসায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। ঢাকায় আমি মোটামুটি ১০ দিনের মতো ছিলাম। বাসায় আমি দিনাজপুর হয়েই গিয়েছি। কারন, বাসার মানুষ যাতে বুঝতে না পারে যে, আমি এতোদিন ঢাকায় ছিলাম। বাসায় এটা সেটা বলে বুঝিয়েছি। কিন্তু মন খুলে সব কথা বলতে পারিনি।
বাসায় আসার ১ মাস পরে দিনাপুর গিয়ে ওই মাদরাসা শিক্ষকের বাসা থেকে কম্পিউটার নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার কম্পিউটার আর অক্ষত ছিল না। এক প্রকার নষ্ট করেই ফেলেছিল। বাড়িতে নিয়ে আসার পরে কোনরকমে ৩ মাস ব্যবহার করেছিলাম। তারপর আমার মাদারবোর্ড অচল হয়ে গিয়েছিল। পরে আমি শুনেছি। ওই মাদরাসা শিক্ষকের ২ ছেলে ছিল। তারা খুব ডানপিটে ও অভদ্র টাইপের। ওই দুই ছেলে নিজেরাই আমার কম্পিউটার সেট করে নিজেরা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছে। যাই হোক, তাতে আমি তেমন দুঃখ পাইনি।
বাসায় আসার কিছুদিনের মধ্যে আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। বাসার পরিবেশ আর বাইরের ওই সব পরিবেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান ছিল। আমি বলবো যে, আমি বেঁচে গিয়েছি। আমার আরও বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারতো।
হেডলাইনে বলেছিলাম একটা ভুল সিদ্ধান্তের কথা। নিশ্চয়ই আপনারা এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন যে, আমি কতো বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মাদরাসা শিক্ষক আমাকে যেভাবে বলেছিলেন সেটা আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু তিনি তো আমায় মিথ্যা বলেছিলেন। তিনি যদি মিথ্যা না বলতেন তাহলে আমার জীবন থেকে প্রায় ২টা মাস হারিয়ে যেত না। আমায় এতো কষ্ট পেতে হতো না।
নিজের সিদ্ধান্ত সবসময় নিজে নেবেন। অবশ্যই পরিবারের সহযোগিতা নিবেন কিন্তু নিজের সবকিছু কারও ওপর ছেড়ে দেবেন না। জীবনটা একান্তই নিজের। সুতরাং নিজের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সবারই (নিজের) আছে। সম্ভব হলে নিজে একটা স্টার্টআপ ব্যবসা শুরু করুন। দিনে ১০০ টাকা ইনকাম আসছে – আসুক। ধৈর্য ধরলে সেই ১০০ টাকা ৫০০ টাকায় রূপান্তরিত হতে সময় লাগবে না। তবুও এরকম হুজুগে কোন কাজ করবেন না। সবসময় সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। দ্রুত সিদ্ধান্ত সবসময় ভুল জায়গায় নিয়ে যায় বেশি। মাথা ঠান্ডা তো আপনার সবকিছু ঠান্ডা। কোন বিষয়ে পজিটিভ ভাবার পাশাপাশি ন্যাগেটিভ ইস্যু নিয়েও ভাববেন। মনে রাখবেন, যেখানেই বেশি সুখ – সেখানেই লুকিয়ে থাকে দুখ। বেশি লোভ করতে যাবেন না। আর সবসময় সবকিছু পরিবারের সাথে শেয়ার করবেন। আমি যদি আমার পরিবারের সাথে পুরো বিষয় শেয়ার করতাম তাহলে ঢাকায় এসে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।
পরিশেষে বলতে চাই, সিদ্ধান্ত নিতে ১০০ বার ভাবুন। সবসময় পরিবারের সাথে সবকিছু শেয়ার করবেন। নিজের জীবন অন্যের কাছে বন্ধক রাখবেন না। মন যা চায় তাই করবেন। অল্পে তুষ্ট থাকবেন। নিজে কিছু করার চেষ্টা করবেন। জীবন সুন্দর হবে – অনেক সুন্দর। আমার মতো কোন ফাঁদে পা দেবেন না। কারও কোন অফার বিশ্বাস করার আগে অবশ্যই ভাববেন। জীবন সংক্ষিপ্ত – সংকীর্ণ নয়। কোন সুযোগও হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রহণ করবেন না। সামান্য হলেও সময় নিবেন। সবার জীবন সুখময় হোক – এই কামনায় ইতি টানলাম।
আরও পড়ুন: ওষুধ সেবনের ব্যাপারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী