মানুষ বলতেই আমরা জানি – এরা সভ্য জাতি। কিন্তু এই সভ্য জাতি ধীরে ধীরে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। সভ্য আর অসভ্য। হয়তো আমার কথাগুলো কঠিন মনে হচ্ছে। পুরো আর্টিকেল পড়লেই বুঝে যাবেন আমি কি বলতে চাচ্ছি।
আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে ফিরে যান। তখন রাস্তা-ঘাটে শিক্ষকের সাথে দেখা হলে আমরা সাইকেল থেকে নেমে সালাম দিতাম। শিক্ষকরা খুশি হতেন। তারাও আমাদের খুব স্নেহ করতেন। প্রয়োজনে শাসনও করতেন। শুধু শিক্ষক-ই নয়, আমাদের চেয়ে যারা বড় তাদের আমরা শ্রদ্ধা করতাম। প্রয়োজনে মাথা নীচু করে যেতাম। তারা কোন আদেশ, উপদেশ বা নিষেধ করলে তা মানতাম।
এখন ২০ বছর পরের অবস্থার অর্থাৎ এখনকার অবস্থার কথা বলি। এখন কি সেই অবস্থা আছে? একটা পাগলেও বলবে নাই। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। এখন, শিক্ষক’রাই ডিজিটাল হয়ে গেছে। তাদের আসলে সালাম প্রয়োজন হয় না। তারা তাদের ছাত্রীদের সাথে গানের তালে তালে নাচতে পারে। তারা সিগারেট খেতে পারে। তারা ছাত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে পারে। তারা খোলা মেলা যৌনতা শিক্ষা দিতে পারে। তাহলে তাদের কাছ থেকে যারা শিক্ষা নেয় তারাই আর কেমন হবে!
আমরা এক অসভ্য জাতির ভবিষ্যত সন্ধান পাচ্ছি। এই অসভ্য জাতি ভবিষ্যতের পৃথিবীকে কিভাবে শাসন করবে তা খুবই দুরূহ ব্যাপার। এদের মধ্যে থাকছে না কোন বিবেক বোধ, থাকছে না কোন মনুষত্ববোধ। এরা কাউকে সম্মান দিতেও জানে না, আবার কারও কাছ থেকে সম্মান পাওয়ারও আশা করে না। এক উদ্ভট জাতি তৈরী হচ্ছে এই যুগে। হাতের ময়লা টাকার জন্য এরা সবকিছুই করতে পারে। মন চাইলেই খুন করে ফেলছে। খুন পরবর্তী তার কি শাস্তি হতে পারে সেটা নিয়ে তার কোন কৌতুহল নেই। আর কৌতুহল থাকবেই বা কেন – খুন করার পরেও জামিন পাওয়া যায়। দিব্বি ঘুরে বেড়ানো যায়, দাপটের সাথে বেঁচে থাকা যায়।
কিছু কিছু ঘটনাই আমাদের এটা মনে করিয়ে দেয় যে, এই যুগে আমরা কেউ নিরাপদ নই। খুব ভালো মানুষ হয়ে এই যুগে বেঁচে থাকাটা বড় কঠিন। বাবা তার মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বখাটের আঘাতে মারা যাচ্ছে। মা তার সন্তানের সামনে ধর্ষিত হচ্ছে। মা তার সন্তানকে নিয়ে রেললাইনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সন্তান টাকার জন্য তার মা বাবাকে খুন করছে। কি হচ্ছে না এই যুগে। আরব দেশে যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ ছিল সেটাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে এই সভ্য নামক অসভ্য জাতি। সভ্যতার আড়ালে আমরা সমস্ত অসভ্যতাকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি। একটা মেয়ে যদি রাস্তায় শর্ট প্যান্ট (প্যান্টি) আর ব্রা পড়ে হেটে যায় তবুও আমরা কিছু বলতে পারবো না। তাহলে তার অধিকার খর্ব হবে। আর দুই একজন কথা বললেও তাদের শেষ স্থান হচ্ছে জেলখানা অথবা মৃত্যু।
হয়তো দুই একজন বলবেন যে, এগুলো তো দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আসলে একটা কথা আছে না – “বিন্দু বিন্দু বালু কণা, বিন্দু বিন্দু জল – গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল”। ঠিক এই ভাবেই প্রতিটি গ্রামে এই অসভ্যতা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়বে।
মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এখানে মুসলিমদের কথা বলা হচ্ছে। চারপাশে তাকালে মসজিদের যেন অভাব নেই। কিন্তু শুক্রবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে মসজিদের অবস্থা একটু উঁকি দিয়ে দেখুন। তাহলেই বুঝবেন কি গজবের পরিবেশ তৈরী হচ্ছে। আমি নিজেও তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি না। তাহলে ভালোটা কে! সত্যিকার অর্থে ভালো কেউ নয়। কেউ ভালো নেই। কেউ পরিস্থিতির কারনে আবার কেউ পরিবেশের স্বার্থে।
পুরো পৃথিবীতে ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের জীবনকে সহজ করা। হ্যা, অনেকটাই সহজ হয়েছে। কিন্তু সহজ হওয়ার সাথে সাথে অনেক কঠিনও হয়ে গেছে। নিজের ঈমান ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে, পর্ণ ভিডিও দেখাটা এখন কতো সহজ হয়ে গিয়েছে। মন চাইলেই দেখা সম্ভব। শুধু ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হলো। ১০ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে একদম বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। কয়জন নিজের চরিত্রকে ঠিক রাখতে পেরেছেন? শতকরা হিসেব করা হলে ১% আছে কিনা সন্দেহ! আবার, এসব পর্ণ ভিডিও এতোটা সহজ কিভাবে হলো, বাংলাদেশে এগুলোর এক্সেস কেন বন্ধ করা হচ্ছে না তার কোন জবাব নেই। দেশে কোন সহিংসতা হলে মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা সম্ভব হয় কিন্তু সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর জন্য পর্ণসাইটগুলো চিরতরে বন্ধ করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বললাম, এমন উদ্যোগ হয়তো আদৌ কারও পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়।
এটা তো গেল চরিত্রের কথা। কারন, কিছু মানুষ আপনি খুঁজলে পেয়ে যাবেন এমন যে, তাদের সব ধরণের সিস্টেম বা সুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও তারা এসব ভোগ করে না। এই কলি যুগেও তারা তাদের চরিত্রকে ধরে রাখতে পেরেছেন। এটা আমাদের সবার জন্য শিক্ষণীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে – এই ধরণের মানুষগুলো দিনের দিন পৃথিবী হতে কমে যাচ্ছে।
আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ১০০ টাকার জন্য মানুষ মানুষকে খুন করে ফেলছে। ছোট্ট বিষয় নিয়ে মারামারি-হানাহানি হচ্ছে। ভাই ভাইয়ের শত্রু হয়ে যাচ্ছে। সামান্য জমি-জায়গার জেরে সব সম্পর্ক শেষ করে দিচ্ছে। তাহলে যে ব্যক্তি ১০০ টাকার জন্য কাউকে খুন করে বসলো তাকে কি মানুষ বলা যায়! উত্তর- কখনোই মানুষ নয়। আর এই ধরণের অমানুষগুলোর সংখ্যা দিনের দিন শুধু বাড়ছেই।
এবার আমরা যারা মুসলমান (মুসলিম) হিসেবে পরিচিত তাদের কথাই বলি। এখন মুসলমান মুসলমানে কতো দল, কত বিভক্তি! হাদিস নিয়ে কত রকম মন্তব্য! এই আলেম ওই আলেমকে গালি দিচ্ছে, ভুল ধরছে আরও কত কি! আসলে এসব কিছু কলিযুগে হবে এমনটাই স্বাভাবিক। আমাদের এই শেষ যুগে আর কোন নবী-রাসুল আসবেন না। আর আমাদের মহানবী (সাঃ) এর সময়কাল থেকে আমরা প্রায় ১৪০০ বছর পার করে চলে এসেছি। আর এতে করে আমাদের মধ্যে যে পরিবর্তন এসেছে সেটা সত্যিই ভাবার।
এখন ধর্মকে পুঁজি করে অনেকেই ব্যবসা করছে। কতো পীর কামেল মুরিদ চারপাশে। আমি বিভিন্ন এলাকায় দেখেছি – গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে পীরের বাসায় মানুষ নিয়ে আসে। সেখানে এসবের কিছু অংশ জবাই করা হয় আর বাকিটা বিক্রি করে দেয়া হয়। আবার, ধর্মের নামে কতো রকম ভন্ডামি! নামাজ নাকি নাই। কোরআনে যে নামাজের কথা বলা হয়েছে সেটা এই নামাজ নয় যেটা আমরা মসজিদে গিয়ে আদায় করি। যারা এইসব কথা বলে তারা কিন্তু একক কোন মানুষ নয়। তারাও আলাদা একটি দল। আর আপনি একা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হাতে আপনাকে মরতে হবে।
আগে শুনতাম ইসলাম ধর্মকে বিক্রি করছে অন্য ধর্মাবলম্বীরা। আর এখন তো নিজের চোখেই দেখছি – মুসলিমদের একটা অংশই ইসলাম ধর্মের শত্রু। আর যারা অন্য ধর্মাবলম্বী তাদের কথা তো অনেক পরের ব্যাপার। আমার ঘরের মধ্যেই যদি শত্রু থাকে তাহলে আমি বাইরের শত্রুর কথা কখনোই চিন্তা করবো না।
আমি নির্দিষ্টভাবে কোন পীর, কামেল, মুরিদ এর কথা উল্লেখ করছি না। কারন, তাতে আমার বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এসব ব্যাপারে সবাই কথা বলবে না। কারন, বললে নিজেরই ক্ষতি হবে। আর বেশিরভাগ মানুষ তো এখন এসবের সাথেই যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই ইসলাম ধর্ম অনেকটা বিকৃত হয়ে গেছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে মহা পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন কোনদিন বিকৃত হবে না এবং ঈষৎ পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না। কারন, এর পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজে নিয়েছেন।
আমি আর এই লিখার কলেবর বৃদ্ধি করতে চাচ্ছি না। কারন, বললে অনেক কথা বলা যাবে। আপনাদের পড়ায় অনাগ্রহ চলে আসতে পারে। আমরা সবাই আমাদের বিবেক’কে জাগ্রত রেখে জীবন পরিচালনা করলেই জীবন সুন্দর হবে এবং অসভ্য জাতির মধ্যেও আমরা সভ্য হয়ে বাঁচতে পারবো।
আরও পড়ুন: একটা ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে কতোটা ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে