বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে যেখানে শেখ হাসিনা হলেন প্রধান আসামী। এসএম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে এই মামলার আবেদন করেন। তখন আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এই মামলায় অন্য যারা আসামী হিসেবে রয়েছেন তারা হলেন- পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেকেই মারা যান। এখনও অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার মুদি দোকানি আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে মারা যান। এই ঘটনার আলোকে বাদী হয়ে এক ব্যক্তি শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। গতকাল আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করলে আদালত তা আমলে নেয় এবং মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দেয়া হয়।
হত্যাকান্ডের এই মামলাটিতে বাদীসহ মোট পাঁচজনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। যারা সাক্ষী তারা হলেন শেখ ইফতেখার আহমেদ, সামাদ, এসএম রকিবুল, এস এম রকিবুল ইসলাম মেশকাত ও এস এম হাসানুল ইসলাম। মামলার এজাহারে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো: ১৯শে জুলাই বিকাল চারটায় মোহাম্মদপুর থানার বসিলা চল্লিশ ফিট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিল। আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় চৌরাস্তার মুদি দোকানদার আবু সায়েদ (৪৫)। গুলি তার মাথার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাইদ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর স্থানীয়রা তার গ্রামের বাড়িতে লাশ পাঠিয়ে দেয়। তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহাটে। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার ন্যায্য যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। কোনো ধরণের উস্কানি ছাড়া পুলিশ সদস্যরা আসামিদের নিদের্শে গুলি করে আবু সায়েদকে হত্যা করে। আবু সায়েদ এর বাড়ি পঞ্চগড়। তার বাসার সদস্যরা গরীব হওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না বিধায় সচেতন নাগরিক হিসেবে বাদী বিচারের দাবি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে দমনের নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় আসামী ওবায়দুল কাদেরও বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে উস্কানিমূলক কথা-বার্তা বলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন। এছাড়া, অন্যান্য যারা আসামী হিসেবে রয়েছেন তারাও তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের সাধারন জনগণের উপর গুলি করার নির্দেশ দেন। এজাহারে আরও বলা হয়, হত্যা মামলার তদন্ত হলে অজ্ঞাতনামা আরও তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, এমপি, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম উঠে আসবে।
আরও পড়ুন: ৫ই আগষ্টে শেখ হাসিনার পতন | দেশ বাসীর আনন্দ প্রকাশ