ভালো থাকার জন্য সংসারে স্ত্রীর ভূমিকা অপরিসীম। একজন স্ত্রী চাইলেই সংসারটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলতে পারে, আবার চাইলেই বেহেস্ত বানাতে পারে। সারাদিন কাজ শেষে পুরুষ যখন ঘরে ফিরে তখন সে মূলত একটু শান্তি খোঁজে। আর কিছু নয়। আর এই শান্তিটাই কেবল দিতে পারে তার অর্ধাঙ্গীনি/স্ত্রী। একটা পরিবারের ভালোর জন্য ঐ পরিবারের সবারই ভূমিকা থাকে যদি তা যৌথ পরিবার হয়। কিন্তু এই যুগে যৌথ পরিবার কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমরা যারা ঢাকা শহরে থাকি তারা বেশিরভাগই একক পরিবার। আর একক পরিবারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রী আর সাথে বাচ্চা-কাচ্চা থাকতে পারে। তাহলে একজন মানুষ বাইরে কাজ সেরে ঘরে আসার পরে কার কাছে একটু শান্তি খুঁজবে! অবশ্যই তার স্ত্রীর কাছে। আর তাই এই জায়গায় একজন স্ত্রীর ভূমিকা অনেক বেশি।
সংসারে সুখ দুঃখ থাকবেই। কারও সংসারেই একটানা সুখ থাকে না কিংবা একটানা দুঃখ থাকে না। সুখ দুঃখ আসবে যাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু এই দুঃখের সময়ে অনেকেই ভেঙে পড়ে। স্বামীকে সাহস না দিয়ে বরং নিজেই অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঠিক মতো খায় না, বাচ্চার খেয়াল রাখে না, নিজের প্রতি যত্ন নেয় না আর স্বামী তো পরে রইলো ১০ হাত দুরে। কিন্তু স্ত্রীদের এই কাজটি মোটেও উচিত নয়। একজন মানুষের কতটুকু ক্ষমতা কিংবা কোন ঘটনা ঘটলে সে কিভাবে তা হ্যান্ডল করবে, কতটুকু হ্যান্ডল করতে পারবে সে ব্যাপারে ঐ সংসারের স্ত্রী ব্যতীত আর কেউ বেশি জানে না। আর জানার পরেও যদি স্ত্রী নিঃশ্চুপ হয়ে যায় তাহলে আসলে সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান বের করা কঠিন।
আবার, স্ত্রী যদি চরম জেদি হয় তাহলে তাকে নিয়েও বড় সমস্যা। জেদ এর কারনে আপনার সাথে তার বনিবনা হবে না। সব অবস্থাতেই সে তার জেদ পূরণ করতে চাইবে। মনে রাখবেন, জেদ কখনো সংসারে ভালো কিছু বয়ে আনে না। কিছু কিছু সময় নিয়ে আসতে পারে কিন্তু সবসময় নয়। রাগ-অভিমান, জেদ এগুলো সাময়িক ভালো করলেও একটা সংসারের জন্য আসলে কোনভাবেই কাম্য নয়। অনেক সময় স্বামীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। তখন স্ত্রী যদি তাকে সহযোগিতা না করে তাহলে সে স্বামীর কপাল পোড়া। এরকম হাজারো স্বামী আমাদের চারপাশে রয়েছে।
জীবনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকে। যেমন- কেউ দুটো বিয়ে করে। কোন কারনে এমনটা হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরে যাকে বিয়ে করা হয় অর্থাৎ ছোট বউ সবসময় আদর-যত্ন বেশি পায়। স্বামী সবসময় ছোট বউয়ের প্রতি আকৃষ্ট থাকে বেশি। এরপরেও ছোট বউয়ের যদি চাহিদার তৃপ্তি না আসে, বড় বউয়ের প্রতি কোন আত্মসম্মান না থাকে, তাকে অধিকার দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী না হয় তাহলে সেই সংসারে আর যাই থাকুক – শান্তি জিনিসটা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। সব ব্যাপারেই আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ধরতে বলেছেন। হ্যা, ডিভোর্স শব্দটা কারও জীবনে সুখ বয়ে আনে আবার কারও জীবনটাকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এটা করতে গেলে একজন স্বামীর কতোবার ভাবতে হয় তা কেবল ঐ স্বামীই জানে। এখানে অনেকগুলো বিষয় তাকে ভাবতে হয়। অথচ এই ব্যাপারে কোন স্ত্রী তার স্বামীকে অনেক সহযোগিতা করতে পারে। চাইলেই সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু এমন স্ত্রী খুঁজে পাওয়া বড় ভাগ্যের ব্যাপার।
সত্যিকার অর্থে, ভালো থাকার জন্যে সংসারে স্ত্রীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সব ব্যাপারে স্বামীর প্রতি যদি পজিটিভ থাকে, পজিটিভ মন-মানসিকতা ও আচরণ প্রকাশ করে তাহলে ঐ পরিবারে অশান্তি প্রবেশ করবে না। অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক অথচ সুখি নয়। যারা টাকার দিক থেকে ধনী লক্ষ্য করলে দেখবেন তাদের সংসারে ডিভোর্স এর পরিমাণটা অনেক বেশি। বেশি টাকার কারনে স্বামী কিংবা স্ত্রী উভয় উভয়ের প্রতি পার্সোনাল কেয়ারটা আসলে ভুলে যায়। সব সুখ তারা টাকা দিয়েই কিনতে চায়। কিন্তু তারা জানে না যে, সত্যিকার অর্থে টাকা সব সুখ বয়ে আনে না। আনলেও তা সাময়িক সময়ের জন্য। অথচ দিন আনে দিন খায় এমন পরিবারেও অনেক শান্তি থাকে। সারাজীবন একসাথে থাকতে পারে। স্ত্রী না খেয়ে থাকে তবুও স্বামীর প্রতি কোন অভিযোগ থাকে না। কারন, সে ভালোবাসাটা তার স্বামীর কাছ থেকে ১০০%-ই পায়।
পরিশেষে বলবো, প্রতিটি স্ত্রী যেন তাদের সংসারটাকে নিজের মন মতো গোছান। আর স্বামী যদি নিতান্তই কোন বড় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তাহলে স্ত্রী যেন ধৈর্য ধরে স্বামীর পাশে থাকেন। সেটা যে সমস্যাই হোক না কেন। তাহলেই সংসারে শান্তি আসবে। স্বামী ১০টা কটু কথা বললে স্ত্রীর তখন চুপ থাকা উচিত। তারপর সুযোগ বুঝে শান্ত মেজাজের সময় স্বামীকে প্রতিউত্তর করা উচিত কিংবা বুঝিয়ে বলা উচিত। একটা সংসারে শান্তি নারীর উপর নির্ভর করে ৮০% আর পুরুষের উপর নির্ভর করে ২০%। এটা ঠিক, স্বামী যদি খারাপ প্রকৃতির মানুষ হয় তাহলে আবার বিষয়টা উল্টে যাবে। কিন্তু অস্বীকার করবো না, কেবলমাত্র নারীই পারে একটা পুরুষকে সব অবস্থাতেই স্বর্গীয় সুখ দিতে। আল্লাহতায়ালা নারীদেরকে সেভাবেই তৈরী করেছেন। তবে যে নারীর মানসিকতা যেমন সে নারী তার স্বামীর সাথে তেমনই আচরণ করবে – এটা সন্দেহাতীত।