আওয়ামী লীগ সরকার কয়েকদিন আগে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুথ্যানে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। ছাত্র-জনতার এই গণ আন্দোলন ছিল প্রায় ৩৬ দিনের। আন্দোলনের শেষ মুহূর্তগুলো ছিল বেশ নাটকীয় আর ঘটনাবহুল। সরকার পতনের ঘোষণার আগেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের সবকিছু সরকারি সিন্ডিকেটের হাতেই ছিল। তখন পর্যন্ত সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো।
দলের কোন নেতা-কর্মী হয়তো ধারণাও করেননি যে, শেখ হাসিনা ওই সময় পদত্যাগ করবেন কিংবা দেশ ছাড়া হবেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সময় পেয়েছিলেন মোট ৪৫ মিনিট। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে প্রস্তুতি নিয়ে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে যেতে হয়। অবাক করা বিষয় হলো, শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিমান যখন উড্ডয়ন করে তখন সেখান থেকে কয়েক’শ গুজ দূরে লাখো মানুষের ঢল ছিল।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্র-জনতা গণভবন ও সংসদ ভবন দখল করে নেয়। এমন একটা সময় যাচ্ছে যখন সবার মনে প্রশ্ন যে, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও সিনিয়র নেতারা আসলে কে কোথায় রয়েছেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বলা হচ্ছে, নেতাদের কেউ কেউ আত্মগোপণে চলে গেছেন, কেউ কেউ বিদেশে গিয়েছেন এবং কেউ কেউ ধরা খেয়েছেন। তবে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আওয়ামী লীগের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যও ৫ই আগস্টের আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদই এখন আর দেশে নেই এ কথা চরম সত্য। নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে করতোয়া জানতে পেরেছে যে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সব অংশই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
৫ই আগস্ট দুপুর বেলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তাড়াতাড়ি করে বিমান যোগে দেশ ছাড়েন। তখন তার সাথে যদি অন্য কেউ (দলের লোক) থাকতো হয়তো তারাও তার সাথে চলে যেতেন। শেখ হাসিনার ছেলে জয় আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ জয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের পতনের সময়ও তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সাথে সায়মা ওয়াজেদ জয় সাক্ষাত করেছেন।
ওদিকে লন্ডনে বসবাস করা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বৃটিশ মন্ত্রী। ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক সরকার পতনের সময় দেশে ছিলেন না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নুর তাপস সরকার পতনের দুই দিন আগে সিঙ্গাপুর চলে যান। ৩ জুলাই ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে তিনি দেশ ত্যাগ করেন।
শেখ ফজলে নুর তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুব লীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি দেশে নাকি বিদেশে এ ব্যাপারে সংগঠনের কেউ কোন কিছু জানে না। তবে যুব লীগের একজন নেতা করতোয়াকে অবহিত করেছেন যে, তিনিও দেশে নেই। আন্দোলন চলাকালে তিনি কোন এক সময় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এই বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজাল রয়েছে। অনেকেই বলছেন যে, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেননি। দেশের কোথাও হয়তো গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক আস্থাভাজন সদস্য ছিলেন বরিশালের প্রভাবশালী নেতা আবদুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলন চলাকালে তিনি ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে যান। আজমীর শরীফ ভ্রমণে যাবেন – এমন কথা বলেই তিনি দেশ ছেড়েছেন। আর আসার কোন খোঁজ-খবর নেই।
নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের এমপি দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। শেখ হেলালের ভাই সাবেক এমপি (খুলনা-২) শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে। এরপর আর কোন হদিস মিলেনি। হয়তো দেশের আত্মগোপণে রয়েছে কিংবা বিদেশে চলে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে নার্সকে ধর্ষণ ও পরে নৃশংসভাবে হত্যা