ঔষধ হলো এমন একটি পদার্থ যা রোগের চিকিৎসা, প্রতিরোধ অথবা উপসর্গ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। ঔষধ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, ইনজেকশন, ক্রিম, অথবা পেস্ট। ঔষধের প্রভাব শরীরের বিভিন্ন অংশে পড়ে এবং এটি শরীরের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটায়।
ঔষধের উদ্দেশ্য হলো রোগ প্রতিরোধ করা, রোগের লক্ষণ কমানো, অথবা রোগের চিকিৎসা করা। ঔষধ প্রায়ই রোগের জীবাণু, ভাইরাস, বা অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদানগুলো ধ্বংস করে অথবা শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলির উন্নতি ঘটায়।
বিভিন্ন প্রকার ঔষধ কেন সেবন করা হয়?
ঔষধের প্রকারভেদ এবং তাদের ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
- রোগ প্রতিরোধ:
- ভ্যাকসিন: ভ্যাকসিন এমন ঔষধ যা শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, হেপাটাইটিস বি এবং মেজর ভ্যাকসিন।
- প্রোফিল্যাকটিক ঔষধ: কিছু ঔষধ বিশেষ পরিস্থিতিতে রোগের প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়, যেমন সর্দি-কাশি প্রতিরোধক ঔষধ।
- রোগের চিকিৎসা:
- অ্যান্টিবায়োটিক: জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, যেমন পেনিসিলিন।
- অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ: ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে, যেমন টাইমফ্লুওর।
- রোগের উপসর্গ কমানো:
- ব্যথানাশক ঔষধ: ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়, যেমন প্যারাসিটামল এবং ইবুপ্রোফেন।
- জ্বর কমানোর ঔষধ: জ্বর কমাতে সহায়ক, যেমন অ্যাসিটামিনোফেন।
- মানসিক স্বাস্থ্য:
- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যান্টি-অ্যানজাইটি ঔষধ: উদ্বেগ কমাতে সহায়ক।
- বিশেষ চিকিৎসা:
- হরমোন থেরাপি: হরমোনের অভাব পূরণ করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন থাইরয়েড হরমোন।
- ক্যান্সার থেরাপি: ক্যান্সারের বৃদ্ধি রোধে ব্যবহৃত ঔষধ, যেমন কেমোথেরাপি ড্রাগস।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন কতটুকু নিরাপদ?
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা সাধারণভাবে নিরাপদ নয়। এর কারণ হলো:
- স্বাস্থ্যঝুঁকি: ঔষধের সঠিক ডোজ জানা না থাকলে অতিরিক্ত বা কম ডোজের ফলে সঠিক প্রভাব পড়তে পারে না বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত প্রভাব: অন্যান্য ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- স্বাস্থ্য ঝুঁকি: কিছু ঔষধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতি করতে পারে, যেমন লিভার বা কিডনির ক্ষতি।
বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার
বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে কিছু সমস্যা দেখা দেয়:
- স্বাস্থ্যসেবা সেবা: অ্যান্টিবায়োটিক সহজলভ্য এবং অনেক সময় স্ব-চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- স্ব-চিকিৎসা: অনেকেই নিজেদের রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে, যা ভুল ডোজ এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণ হতে পারে।
- বহিরাগত বিক্রয়: ঔষধের দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক সহজলভ্য, যা স্বল্পমূল্যে প্রাপ্ত করা যায়।
অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে, যার ফলে ভবিষ্যতে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
ঔষধ সেবনে সচেতনতা বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ
ঔষধ সেবনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
- শিক্ষা ও সচেতনতা:
- প্রশিক্ষণ: ঔষধ ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষা দেওয়া।
- অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম: স্বাস্থ্যকর্মী এবং সরকারি সংস্থার মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- ডাক্তারের পরামর্শ:
- নিয়মিত চেক-আপ: রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ঔষধের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা।
- পেশাদার পরামর্শ: ঔষধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
- রেগুলেশন ও মনিটরিং:
- নিয়ন্ত্রণ আইন: ঔষধের বিক্রি এবং ব্যবহারের উপর কড়া নিয়ম প্রণয়ন করা।
- মনিটরিং: ঔষধ ব্যবহারের পর্যবেক্ষণ করা এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা কম। কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মাত্র ৩০-৪০% মানুষ ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানেন। এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোগীর জন্য গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
দরকারি কিছু ওটিসি ঔষধের বিবরণ
বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন কিছু দরকারি ওটিসি (অভার-দ্য- কাউন্টার) ঔষধের মধ্যে রয়েছে:
- প্যারাসিটামল: সাধারণ ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি প্রায় সব ধরনের ব্যথার জন্য সহায়ক, যেমন মাথাব্যথা বা মাংসপেশীর ব্যথা।
- ইবুপ্রোফেন: ব্যথা ও ইনফ্লামেশন কমাতে সহায়ক। এটি সাধারণত মাংসপেশীর ব্যথা, মাথাব্যথা, এবং গাঁটের ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- অ্যাসিডিটি প্রতিকারক: যেমন রেনটিডিন, যা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি খাবার পর অম্লীয় অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যালার্জি প্রতিকারক: যেমন সিট্রিজিন, যা অ্যালার্জির লক্ষণ কমাতে সহায়ক। এটি নাক দিয়ে পানি পড়া, চুলকানি, এবং চোখ লাল হওয়া কমাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ঔষধগুলো সাধারণত স্বল্পমেয়াদী সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার বা উচ্চ ডোজে সেবনের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পদক্ষেপ: তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা