চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সচিবালয় অবরোধ করে থাকা আনসার সদস্যরা ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যান। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় চার শতাধিক আনসার সদস্যকে, যাদের মধ্যে দুইজন নারীও রয়েছেন, গ্রেপ্তার করে। রোববার রাতের দিকে তাদের ঢাকার শাহবাগ, রমনা, পল্টন, এবং মতিঝিলসহ বিভিন্ন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত সচিবালয় গেট থেকে পুলিশের প্রিয়জন ভ্যানে করে তাদের থানায় পাঠানো হয়।
রাত দুইটার দিকে সচিবালয়ের দুই নম্বর গেটে দেখা যায়, ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে যারা সচিবালয়ের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদেরকে বাহিরে এনে সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাদের নিরাপত্তায় চারপাশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
সকাল থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আনসার সদস্যরা চাকরির স্থায়ীকরণের দাবিতে সমাবেশ করেন। বিকেলের দিকে তারা সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে জড়ো হন এবং নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যার পর আন্দোলনরত আনসারদের নেতৃত্বের সাথে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৈঠক করেন এবং তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। তবুও, আনসার সদস্যরা তাদের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে সচিবালয় গেট অবরোধ করে রাখেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়মুখী একটি ত্রাণের গাড়ি আটকে দেন।
রাত ৮টার দিকে, উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের অবরুদ্ধ করার খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে আনসার সদস্যরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। পরে ছাত্ররা শিক্ষা ভবনের দিকে সরে গেলে আনসার সদস্যদের স্থান ত্যাগের সুযোগ করে দেয়। তবে, তারা সেই সুযোগ না নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে, ছাত্ররা একত্রিত হয়ে পাল্টা ধাওয়া দিলে আনসার সদস্যরা জিরো পয়েন্টের দিকে সরে যান এবং সেখানে সংঘটিত হয়ে ছাত্রদের ওপর আবারো হামলা চালান। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বাঁশের লাঠি দেখা যায়। এই সংঘর্ষে আনসার সদস্য, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে পৌঁছায় এবং ছাত্ররা মিছিল নিয়ে চারদিক থেকে সচিবালয়ের দিকে আসতে থাকলে আনসার সদস্যরা পিছু হটেন। এসময় সচিবালয়ে অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের হয়ে আসতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আনসারদের সচিবালয়ে আটকে রাখার খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। শিক্ষা ভবনের কাছে পৌঁছানোর পর আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এতে মিছিলের সামনের দিকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক আহত হন। শিক্ষার্থীরা তখন পেছনে সরে গিয়ে আনসার সদস্যদের স্থান ত্যাগের সুযোগ করে দেয়। তবে আনসাররা তাদের ওপর হামলা চালানো অব্যাহত রাখে এবং গুলি ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে শিক্ষার্থী ও পুলিশ মিলে আনসার সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আনসারের একটি সূত্র জানায়, ১৯ জন সমন্বয়কের নেতৃত্বে তারা এই আন্দোলন চালাচ্ছেন। প্রধান সমন্বয়ক নাসির সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করে এক সপ্তাহের সময় নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। তবে কিছু উচ্ছৃঙ্খল আনসার সদস্য উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যদিও তারা তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন, তবুও তারা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানাচ্ছেন।