আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার মধ্যরাতে ঢাকার পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি শাখার যুগ্ম কমিশনার রবিউল ইসলাম ভূঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
হাজি সেলিম, যিনি পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজার এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ঢাকা-৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে, ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে পরাজিত হন।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজি সেলিম ঢাকা-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে একই আসন থেকে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজি সেলিম প্রার্থী হননি। তার পরিবর্তে তার ছেলে সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিমকে ঢাকা-৭ আসন থেকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ এবং তিনি নির্বাচিতও হন।
হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে। ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিচারিক আদালত এই মামলার রায় দেন এবং হাজি সেলিমের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০২২ সালে হাইকোর্ট ওই মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন। পরবর্তীতে, তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং কিছুদিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত তাকে জামিন দেন।
এই গ্রেপ্তার জনমনে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। হাজি সেলিমের গ্রেপ্তারের পেছনের কারণ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। তার গ্রেপ্তার কি নতুন কোনো তদন্তের সূচনা, নাকি পুরানো কোনো মামলার রায় বাস্তবায়ন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, যেভাবেই হোক না কেন, হাজি সেলিমের গ্রেপ্তার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে এ বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ঘটনা শুধু রাজনৈতিক মহলেই নয়, জনসাধারণের মাঝেও বেশ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি বড় পদক্ষেপ। আবার কিছু মহল এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে। যেভাবেই দেখা হোক না কেন, এই গ্রেপ্তার বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভ্যানে লাশের স্তূপ: একটি ভয়ঙ্কর ভিডিও এবং তার অনুসন্ধান