শ্রমিক অসন্তোষ এর কারণে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে ১১৪টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি কারখানা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে এবং ৬০টি কারখানা স্ব-বেতনে ছুটিতে রয়েছে।
সারাদেশে মোট ২,০২৮টি কারখানা খোলা থাকলেও, ২টি কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। ১,৩০৯টি কারখানা আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে, যা মোট কারখানার ৬১.০৫ শতাংশ। ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শারমিন গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, মন্ডল, লুসাকা গ্রুপসহ অন্তত ২২টি গ্রুপ/কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ও বুধবার সকালে কারখানাগুলোর সামনে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আশুলিয়ায় খোলা ছিল, কিন্তু বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা কাজ না করায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম জানান, শিল্পাঞ্চলে কোনো সহিংসতার ঘটনা নেই। যারা পারছেন, কারখানা চালাচ্ছেন; যারা পারছেন না, ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন।
বেতনভাতার দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে গাজীপুরের চক্রবর্তী এলাকায় বেতন-ভাতার দাবিতে সড়কে অবস্থান নেন তারা। গতকালও বকেয়া বেতনের দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন।
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বে-আইনী ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে অনেক মালিকই ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধের দাবি তুলেছিলেন। বিজিএমইএ’র সভায়ও এই দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে শ্রমিকদের এবং শিল্পের স্বার্থ চিন্তা করে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
গতকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর, বিভিন্ন গ্রুপ/কারখানার মালিকপক্ষ নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো মূলত বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকার উভয় পাশে, জিরাবো টু বিশমাইল সড়ক এবং কাঠগড়া অঞ্চলে অবস্থিত।
বিকল্প আর কোনো পথ খোলা ছিল না মালিকপক্ষের সামনে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে কারখানা চালু রাখার। কিন্তু পরিশেষে শিল্পের সাধারণ নিরীহ শ্রমিক ও সম্পদ রক্ষায় মালিকপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে সরকার শক্ত অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছে। আশুলিয়ায় বিক্ষোভের সময় হামলা, ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের অনেককে আশুলিয়ায় নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, নাসা গ্রুপের কারখানার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাকে বিক্ষোভকারীরা মারধর করলে তাঁকে উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। এ সময় শ্রমিকদের হামলায় তিনি চোখে আঘাত পান। সহকারী পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাসের মাথা ফেটে যায়। পুলিশের চার-পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছেন।
এমতাবস্থায়, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ধৈর্য ধারণ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় নাগরিক কমিটি এর আত্মপ্রকাশ: নতুন রাজনৈতিক যাত্রার সূচনা