কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই বছরের মৌসুমী বৃষ্টির মধ্যে সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এই বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ ধরনের অতিবৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছে। যদিও মৌসুমী বৃষ্টিপাত এ সময়ে স্বাভাবিক ঘটনা, তবে এবারের বৃষ্টিপাত অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে।
দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টির পূর্বাভাস
কক্সবাজারে গত বুধবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী দুই দিনও এ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এই দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি কেবল জনজীবনকেই স্থবির করে দেয়নি, বরং জেলার অনেক এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে।
জেলায় শতাধিক জনপদ পানির নিচে
কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে। জেলার শতাধিক জনপদ ইতোমধ্যেই পানির নিচে চলে গেছে, এবং সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক বাড়িঘর ও ফসলি জমি ডুবে গেছে। এমনকি শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটেও পানি জমে যাওয়ায় মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
পাহাড়ি ঢলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল শুরু হয়েছে। এই ঢলের কারণে নিচু এলাকার অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং আবহাওয়াবিদরা পাহাড়ি এলাকাগুলোর জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছে। বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে, যা সম্পদ এবং জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে।
বৃষ্টি থামার পরের পরিস্থিতি
বৃষ্টিপাতের পর জলাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ একত্রে কাজ করছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করার জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা এবং প্লাবনের ঝুঁকি রয়েছে, সেসব জায়গায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা দিতে মাঠে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে পানিবন্দি মানুষদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন
এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি এবং জলাবদ্ধতা কক্সবাজারের জন্য একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও, দীর্ঘমেয়াদী কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনকে সঠিক পরিকল্পনা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে।
আরও পড়ুন: জাতীয় নাগরিক কমিটি এর আত্মপ্রকাশ: নতুন রাজনৈতিক যাত্রার সূচনা