পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে তন্মধ্যে ইসলাম সবচেয়ে শান্তি প্রিয় ধর্ম। এই ধর্মের সকল মানুষ একজন সত্তায় বিশ্বাসী আর তিনি হলেন মহান আল্লাহতায়ালা। আমি নিজেও একজন মুসলিম আর তাই আমি গর্বিত। আমাদের শেষ নবী ও রাসুল হলেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)।
একরাশ দুঃখ নিয়ে বলতে হচ্ছে এই ইসলাম থেকে মানুষ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। এমন না যে মুসলিমরা দিনের দিন অন্য ধর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে কিন্তু তারা ইসলামের নিয়ম-নীতি থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। নামে মাত্র মুসলিম থেকে কোনো লাভ নেই। মুসলিম হিসেবে আমাদের উপর অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বিধি নিষেধ রয়েছে। আমরা যদি এসব না মেনে চলি তাহলে মুসলিম হিসেবে আমাদের পূর্ণতা কোথায়!
যাই হোক, আজকে আমি মূলত এই বিষয় নিয়েই কথা বলবো যে, কিভাবে আমরা মুসলিমরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
বিভিন্ন দিক থেকে আমরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের জীবন ব্যবস্থা এমন হয়ে যাচ্ছে যে, আমরা অটোম্যাটিক ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। যেমন, সামগ্রিক ঢাকা শহরের মানুষের জীবন ব্যবস্থা এমন যে – বেশিরভাগ মানুষ রাত ১ টা থেকে ২ টার মধ্যে ঘুমায়। বিশেষ করে আমরা যারা মার্কেটিং এর চাকরি করি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি তাদের কথা তো বলাই লাগে না। তো এতে করে আমরা ভোরবেলা আর উঠতে পারি না। বেশিরভাগ মানুষই ফজরের নামাজ আদায় করতে পারি না। পারি না মানে পারি-ই না। মন-মানসিকতা এমন হয়ে যাচ্ছে যে, আমাদের মনেই হয়না যে ভোরবেলা বা দিনের শুরুতে আমাদের নামাজ পড়তে হয়। এই জীবন ব্যবস্থার সাথে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। এই জীবন ব্যবস্থা আমাদের ইসলাম থেকে ধীরে ধীরে আমাদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে যা হুমকিস্বরূপ।
আবার, শহর গ্রাম নগরে ইন্টারনেট ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যেমন ধরুন ফেসবুক; এই ফেসবুক যখন ছিলো না তখন মানুষ ঘুমানোর আগে ঘন্টার পর ঘন্টা হয়তো মোবাইল ফোন দেখতো না। কিন্তু এখন বিষয়টি অটোম্যাটিক হয়ে যাচ্ছে। ঘুমাতে গেলে মোবাইল বের করে ফেসবুকে ঢুকতেই হবে আর একবার ঢুকলে কখন যে ২/৩ ঘন্টা পার হয়ে যায় তার কোন খোঁজ-খবর-ই থাকে না। এতে করে গ্রামের অনেক মানুষ এখন ফজরের নামাজ ঠিক মতো পড়তে পারে না।
আবার দেখুন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে শিকড়েই সমস্যা। ইসলাম শিক্ষা বইগুলো নিয়ে প্রতি বছরই কোন না কোন বিতর্কের জন্ম হয়। আর হবেই বা না কেন, এমন সব বিষয় সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা আসলে মেনে নেয়ার মতো নয়। এখন, কোমলমতি বাচ্চারা যদি জীবনের শুরু থেকেই ভুল কিছু শিখে ফেলে তাহলে পরবর্তীতে তাদের স্মৃতি থেকে তা মুছে ফেলা মুশকিল। তারা সেটাকেই সত্য মনে করবে। আবার, মাদরাসাগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও মাঝে মাঝে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, কোমলমতি বাচ্চাদের সাথে যৌন লিপ্সা পূরণের স্বার্থে খারাপ আচরণগুলো মেনে নেয়ার মতো নয়। আবার, এসব দুই একটি ঘটনার কারণে অনেক বাবা মা-ই তাদের সন্তানকে মাদরাসায় দিতে অনুৎসাহিত হচ্ছে। সবমিলে পুরো ব্যাপারটি মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।
আমি মনে করি, প্রথম শ্রেণী থেকে ১০ শ্রেনী পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষাকে আবশ্যিক বিষয় করা উচিত। এই বিষয়ের পরীক্ষা কঠিন করে নেয়া উচিত। তাহলে বাচ্চারা এই বিষয়টি খুব মনোযোগের সাথে পড়বে। শুধুমাত্র ইসলাম শিক্ষা সঠিকভাবে প্রচারের স্বার্থে সরকার ইচ্ছে করলেই এমনটা করতে পারে। মুসলিম হিসেবে এরকমটা বলার বা চাওয়ার অধিকার আমাদের আছে।
আবার, কয়েক বছর আগেও আমি যখন রাস্তায় হাটতাম, রাস্তায় ছোটদের সাথে দেখা হলে তারা সালাম দিত। শ্রদ্ধা করতো। আমরাও অনেক ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনি এখন ছোটদের কাছে এমনটা আশা করতেই পারবেন না। তারা আপনাকে সালাম দেবে না, সম্মান করবে না, আপনাকে দেখে ভয় করবে না, আপনাকে দেখে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করবে না। বরং তাদের সাথে আপনি যদি তর্কে যান তবে নিশ্চিত আপনাকে অপমানিত হয়ে আসতে হবে। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া এই প্রজন্মের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এর ভয়াবহতা ইসলামে প্রভাব বিস্তার করছে। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ধর্ম সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখছে না। পার্থিব জীবনটাকেই তারা সবকিছু মনে করছে। তাদের মধ্যে মনুষত্ববোধ তৈরী হচ্ছে না। যে বয়সে পড়াশোনা করার কথা সেই বয়সেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মিথ্যা কথা বলা শিখছে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে বড় করছে। সবমিলে আমরা এক ভয়াবহ প্রজন্মের বাস্তব স্বপ্ন দেখছি। ভবিষ্যতে এই প্রজন্ম কিভাবে নিজেদের সামাল দেবে বড় চিন্তার বিষয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – এই প্রজন্মে মোবাইল ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারনে কোন কিছু আর গোপন থাকছে না। কচি কচি ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে খারাপ কিছুর সাথে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের এইসব বিষয়কে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিশেষভাবে পর্ণ ভিডিও। এসবের যেন এখন ছড়াছড়ি। মোবাইলে দুটি ক্লিক করলেই সব পাওয়া যাচ্ছে। সরকার থেকে এসব বন্ধে কোন উদ্যোগই যেন নেই। উদ্যোগ যদি থাকতোই তাহলে এত সহজলভ্য হতো না এসব বিষয়। আর এইসব বিষয়ে যারা আসক্ত হয়ে যাচ্ছে তাদেরকে ইসলামের পথে নিয়ে আসা খুব কঠিন। সুতরাং তারা ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে।
ইসলামে ছেলেমেয়েদের বিয়ের কথা বলা হয়েছে। পরিপূর্ণ যৌবন আসলেই বিয়ের কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মেয়েদের সর্বোচ্চ ১৬ বা ১৭ বছর আবার ছেলেদের সর্বোচ্চ ১৮ বছরের মধ্যেই যৌবনের পূর্ণতা দেখা যায়। এই বয়সেই যদি তারা বিয়ে করে নেয় তাহলে তারা আর বিপথে যাবে না। বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক তেমন একটা তৈরী হবে না। রাত জেগে খারাপ কোন কিছু করবে না। কিন্তু এই যুগে দেখা যায় উল্টো চিত্র। ছেলের বয়স ৩০ পার হয়ে যায় তবুও ক্যারিয়ার নিয়েই পড়ে থাকে। আবার, মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ৩০ পার হলে তাদের আর বিয়ের যেন প্রয়োজনই পড়ে না। বুড়ো বয়সে একটি ছেলে বা মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমরা মনে করি বোধ হয় নাতি-নাতনী কিন্তু বাস্তবে সম্পর্কে ছেলে বা মেয়ে। এসব বড় ভাবায় আমাদের। মানুষ পার্থিব জগতকে এমনভাবে টেনে নিচ্ছে জীবনে – যার জন্য বিয়ের মতো একটি পবিত্র বিষয়কেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। জীবন থেকে যৌবনের সোনালী সময়টাকে অপচয় করে ফেলছে। যদি তারা ইসলাম বিশ্বাস করতো, মানতো, নিজের মধ্যে অনুশোচনা নিয়ে আসতো তাহলে এই দেরিতে বিয়ের প্রবণতা কমে যেত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক উল্টোটা। তো সবমিলে এইসব বিরূপ পরিস্থিতির কারনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
আবার, বিশ্বব্যাপী ইসলামকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ডক্টর জাকির নায়েক যখন সব ধর্মের সত্যতা তুলে ধরলেন দেখা গেল ভারতের হাজার হাজার হিন্দু মুসলিম হয়ে যাচ্ছিল। কারন, তারা তাদের ধর্মের সত্যটা জানতে পেরেছিল। তখন ভারত থেকে ডক্টর জাকির নায়েক’কে বিতাড়িত করা হলো। এরকম বহু ঘটনা আছে। কিছু মানুষ সত্যটা জেনেও নিজেকে ইসলামের দিকে সমর্পণ করতে পারছে না কারন তার পরিবেশ পরিস্থিতি তাকে সেটা করতে দিচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে ডক্টর জাকির নায়েক এর ইসলাম প্রচার কেউ বন্ধ রাখতে পারেনি। কোনদিন কেউ পারবেও না। ইসলাম জোর করে কাউকে মুসলিম বানানোর পক্ষে নয়। মানুষ সত্যটা জানতে পারার পর নিজ ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। এভাবে পরোক্ষভাবে কিছু মানুষ ইসলাম থেকে বিচ্যুত হলেও পরিমাণটা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। কারন, তারা তো পূর্বে মুসলিম ছিলো না।
এই লেখার কলেবর আরও বাড়াতে পারতাম। আমার কাছে বলার মতো আরও অনেক বিষয় রয়েছে। সম্ভব হলে আপডেট আসবে ইনশাআল্লাহ। আমরা যারা মুসলিম আছি তারা ইসলামকে আরও ভালোভাবে যেন জানার চেষ্টা করি, মহান আল্লাহতায়ালার আদেশ নিষেধ যেন মেনে চলি। ইসলামের পথ থেকে সামান্যতমও যেন নিজেকে বিচ্যুত না করি। সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে খারাপ বিষয় থেকে রক্ষা করুক, আমাদের মাফ করুক (আমিন)।