সত্যিই আমরা এক ভয়াবহ সময় পার করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ৩০ বছর বয়সে যতগুলো খারাপ সময় পার করে এসেছি তন্মধ্যে এটিই সবচেয়ে জঘন্যতম ও নিকৃষ্টতর। আমি যখন এই লিখা লিখছি তখনও দেশ বিভীষিকাময়। মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে নিরাপদ বোধ করছে না। এখনও কারফিউ শেষ হয়নি। কখন কাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অবস্থা যে এমন হবে তা কেউ বোধ হয় কল্পনাও করেনি। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো – এই আন্দোলনে অনেকগুলো প্রাণ ঝরে গেছে। বেশ কিছু নিষ্পাপ প্রাণও ঝরে গেছে। ঘরের মধ্যে থেকে বাইরের অবস্থা জানালা দিয়ে দেখতে গিয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এইসবকে আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্বারজনক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করতে পারি।
রংপুরের আবু সাঈদ ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। বেচারা কেবল দাড়িয়ে ছিল আন্দোলনের প্রতীক হয়ে। তাকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে এবং তিনি তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি খুব গরীব পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন। তার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। কে জানতো, তাকে পুলিশ সত্যি সত্যিই গুলি করবে।
তার মতো অনেকেই প্রাণ দিয়েছে। অনেকেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা অনুসারে প্রায় ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আর আহত তো অনেক হয়েছে। অনেকেই এখনও হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের সবার স্বপ্ন ছিল হয়তো বড় হয়ে ভালো কিছু করার। কিন্তু একটি আন্দোলন তাদের সবকিছুকে ধ্বংস করে দিলো মনে হচ্ছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিভিন্ন কথা-বার্তা বলছেন। সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বলছেন। হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে যাতে পুলিশ আর এভাবে নিরস্ত্র জনগণের উপর গুলি না চালায়। এটার রায় হয়তো খুব শীঘ্রই আমরা জানতে পারবো। কোটা সমন্বয়ক যারা তাদের মধ্যে প্রধান ৬ জনকে ডিবি কার্যালয়ে নিরাপত্তা দেয়ার নামে আটকে রাখা হয়েছে। সবমিলে দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অন্যদিকে, বিদেশ থেকে যেসকল ভাইবোন নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠাতেন তারা তা কমিয়ে ফেলছেন। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পরা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়। কোন আন্দোলন থেকে এভাবে মানুষ মারা যাক তা আমরা কেউ-ই চাই না। সবাইকে একটু ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আন্দোলনকারীরা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা সরকার – কারা কতোটা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে তা হয়তো জনগণ নির্ধারণ করবে। তবে সবসময় ধৈর্যের পরিচয় সবারই দেয়া উচিত। দেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এটাও খুব খারাপ একটি বিষয়। আমরা সবার সবকিছুরই নিরাপত্তা চাই। সৃষ্টিকর্তার কাছে কেবল এই প্রার্থনাই রইলো যেন অতি দ্রুত এই বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।