বর্তমান সময়ে কোন যান্ত্রিক পণ্য খরিদ করলে তৎসঙ্গে একটি ছোট পুস্তিকা বা গাইড লাইন প্রদান করা হয়। এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন কেন এটি দেয়া হয়ে থাকে?
কারণ যন্ত্রটি কিভাবে চালাতে হবে, কিভাবে কোন সুইচ অফ বা অন করলে কি কাজ হবে কিংবা বিভিন্ন রেগুলেটর কমালে অথবা বাড়ালে কি ধরনের কাজ করবে তার বিষদ বিবরণ পুস্তিকাটিতে থাকে।
পণ্য যন্ত্রটিকে ম্যানুয়াল বা গাইড পুস্তিকা অনুযায়ী যথার্থভাবে চালাতে পারলে যথাযথ সফলতা পাওয়া যাবে।
শুধু তাই নয় ম্যানুয়াল পুস্তিকা ফলো করে চলতে পারলে যন্ত্রটির অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- উপর থেকে পড়ে গেলে কি ক্ষতি হতে পারে, ভিজে গেলে তখন কি করা দরকার, কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় যন্ত্রটিকে রাখা দরকার ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার লক্ষ্য করার বিষয় ঐ ম্যানুয়াল পুস্তিকাটি কিন্তু পণ্যটি যে সংস্থা বা যে কারখানা থেকে নির্মিত সেখান থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে।
আমাদের জানা দরকার কেনই বা কেবলমাত্র নির্মানকারী সংস্থটি ওটা প্রদান করে থাকে। এর কারণ অন্য কিছু নয়, যেহেতু পণ্যটি নির্মাণ সংস্থা প্রস্তুত করেছেন তার টেকনোলজিক্যাল ভাল মন্দ দিকগুলো কেবল ঐ সংস্থারই জানা থাকে অন্য কারো নয়।
এ ধরনের প্রসঙ্গটা অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়, কিন্তু মনে করি মানুষ একটি যন্ত্র, মিথ্যা নয়, মানুষ একটি জটিল যন্ত্রই।
একটি সুপার কম্পিউটারের চেয়েও লক্ষ লক্ষ গুন বেশী জটিল হচ্ছে মানুষের দেহ যন্ত্র। তাই এর পরিচালনার জন্য একটি নির্দেশিকা থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। আর এ নির্দেশিকা বা ম্যানুয়ালটা হওয়া চাই সুন্দর সঠিক ও নির্ভুল। আর এ ম্যানুয়ালই হল আল-কোরআন।
পণ্য নির্মাতা সংস্থা যেমন পণ্যটির সঠিক ব্যবহারের জন্য ম্যানুয়াল প্রদান করে থাকেন তেমনই আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন আমাদের স্রষ্টা আমাদের এ আল-কোরআন নামক ম্যানুয়ালটি প্রদান করেছেন। এতে তিনি মানুষের জীবনে চলার সমস্ত পদ্ধতি অবহিত করিয়ে দিয়েছেন।
মানুষ নিজেই একটি পণ্য কিংবা যন্ত্র হয়ে তার নিজস্ব ম্যানুয়াল তৈরি করতে পারে না। বরং যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর দ্বারাই ম্যানুয়াল প্রদানের কাজটি সম্পন্ন হওয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।
এ ব্যাপারে হাস্যকর একটি গল্প আপনাদের শোনাই। শোনা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে যখন প্রথম মোটর কার এসেছিল তখন এখানকার মানুষ মোটরকার সম্বন্ধে একেবারে অজ্ঞ ছিলেন।
আমাদের দেশীয় কোন ড্রাইভারও ছিল না। তাই মোটরকার উৎপাদনকারী সংস্থা থেকে এর ড্রাইভারও পাঠানো হত।আমাদের দেশীয় এক নবাব ইউরোপীয় দেশ থেকে একটি গাড়ি এনেছিলেন সঙ্গে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চালক এসেছিল।
তার কাছে এটা পরিষ্কার ছিল যে নবাব গাড়ি সম্বন্ধে একেবারে অজ্ঞ। একদিন নবাব চালকটিকে বেগমকে নিয়ে ভ্রমণ করিয়ে আনার জন্য বলাতে চালক যা বলেছিল তা সত্যিই হাসির উদ্রেক করে।
চালক নবাবকে জানালেন গাড়িটি খারাপ আছে এবং তা সারিয়ে তুলতে দরকার ১০ কেজি ঘি, ২০ কেজি চাল ও ২০ কেজি তেল, এখন আমরা একথা শুনে কি বলব, নিশ্চয় আমরা বলতে পারি নবাবের অজ্ঞতার জন্যই চালক তার সুযোগ নিয়েছিল।
সে জন্য মুসলমানদের কোরআন সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন, তা না হলে পদে পদে আমাদের ঠকতে হবে এবং অপরের দ্বারস্থ হতে হবে।
কতেক মুসলিম ভাইয়ের কথা শুনলে না হেসে পারা যায় না। তারা অজুহাত খাড়া করে বলে, যদি কেউ কোরাআন বুঝে অপরাধ করে, তবে তার সাজা অপেক্ষাকৃত বেশী হবে। আর না বুঝে করলে অপরাধ কম হবে। এ ভাইদেরেকে আমি একটি বাস্তব উদাহরণ দিতে চাই।
ধরুন, আইনে আছে কোন ট্রেনিংরত গাড়ির চালক ট্রেনিং-এর সময়কালে কোন দুর্ঘটনা ঘটালে তাকে জরিমানা দিতে হবে ১ হাজার টাকা।
অপর পক্ষে ট্রেনিংপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি যদি দুর্ঘনা ঘটায় তাহলে তার জরিমানা দু\\\’হাজার টাকা, আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় ট্রেনিংরত চালকটি লাভবান।
তাই তার উচিৎ ট্রেনিং শেষ না করে সবসময় ট্রেনিং রত থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে এটি নির্বুদ্ধিতার পরিচয় ছাড়া কিছু নয়।
কারণ ট্রেনিং প্রাপ্ত চালক সারা জীবনে হয়ত মাত্র দুই একটি দুর্ঘটনা ঘটালে তার জরিমানা হবে মাত্র ২ হাজার টাকা অপরপক্ষে ট্রেনিংরত চালকটি সারা জীবনে দুর্ঘটনা ঘটাবে হয়ত ৫০টি।
অতএব, কোরআনের অর্থ জেনে বিজ্ঞ হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রকৃতপক্ষে কোরআনের বোধগম্যতা যত বেশী হবে সমাজের সংস্কার তত বেশীই হবে।
আজ আমাদের মুসলিমদের অবস্থা একারনেই নাজুক যে, এ জাতি কোরআন বোঝার ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন।