বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে মরিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মরিচ আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। কিন্তু সঠিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই মরিচ চাষ করে না। তাই তারা ক্ষতির সম্মুখ্যীন হয়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই মরিচের চাষ প্রচলিত, তবে উন্নত জাতের মরিচ চাষ করে উচ্চফলন ও লাভবান হওয়া সম্ভব। এই নির্দেশিকাটিতে উন্নত জাতের মরিচ চাষের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জাত নির্বাচন:
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) উন্নত জাতের মরিচের বেশ কিছু জাত উদ্ভাবন করেছে। এসকল জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বারি মরিচ-১ (সারা বছর): রোগ প্রতিরোধী, উচ্চফলনশীল, দীর্ঘ ফলনকালীন, তীব্র ঝাল।
- বারি মরিচ-২ (গ্রীষ্মকালীন): রোগ প্রতিরোধী, উচ্চফলনশীল, মাঝারি ঝাল।
- বারি মরিচ-৩ (শীতকালীন): রোগ প্রতিরোধী, উচ্চফলনশীল, তীব্র ঝাল।
- সনিক: রোগ প্রতিরোধী, উচ্চফলনশীল, দীর্ঘ ফলনকালীন, মাঝারি ঝাল।
- প্রিমিয়াম: রোগ প্রতিরোধী, উচ্চফলনশীল, দীর্ঘ ফলনকালীন, তীব্র ঝাল।
জমি, মাটি ও অন্যান্য বিষয়:
মরিচ চাষের জন্য পানি নিষ্কাশণ ব্যবস্থা সমৃদ্ধ, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ, ৬.০-৭.৫ (PH) এর অম্লতাযুক্ত বেলে-দোঁয়াশ বা পলি-দোঁয়াশ মাটি উপযোগী।
বীজ বপন:
বীজতলায় বীজ বপন করার জন্য বালি, মাটি ও জৈব সারের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজ বপনের ১০-১৫ দিন পর চারা রোপণের উপযোগী হয়ে ওঠে।
রোপণ:
রোপণের পূর্বে জমিতে জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। লাইন থেকে লাইন ২৪-২৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ১২-১৬ ইঞ্চি দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করতে হবে।
সেচ:
নিয়মিত সেচ প্রয়োজন, তবে অতিরিক্ত সেচ এড়াতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। সেচ দিলেও খুব বেশি করে দেয়া যাবে না। স্বাভাবিক পরিমাণে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ:
সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষার ফলাফল অনুসরণ করা উচিত। সাধারণত জৈব সার, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে আপনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতা নিতে পারেন।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ:
নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য আগাছানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আগাছা নাশক বার বার ব্যবহার না করাই ভালো। প্রথমবার আগাছা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আগাছানাশক দিয়ে পরের বার নিড়ানি দেয়াই ভালো।
পোকামাকড় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ: পোকা মাকড় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত তদারকি ও নজর রাখতে হবে।
বাজারে বিভিন্ন ধরণের পোকা দমনকারী ওষুধ পাওয়া যায়। তবে আপনাকে ভালো মতো জানতে হবে কোন পোকার জন্য কোন বালাইনাশক?
এক্ষেত্রে আপনি যারা এসব ব্যাপারে জানে তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিন নতুবা উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতা নিতে পারেন।
সাধারনভাবে বাজারে বিভিন্ন পোকা মাকড় দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোরানিলিপ্রল, সাইপারমেথ্রিন, থায়ামিথক্সাম+ক্লোরানিলিপ্রল, সাইপারমেথ্রিন, সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশকসহ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উত্তমরূপে উত্তম সময়ে মরিচ চাষ করতে পারলে লাভবান হওয়া যায়। কারন, বাজারে কোন না কোন সময় মরিচের দাম অবশ্যই বাড়ে।
আর ২/৩ বার মরিচ উঠানোর পরেই যদি ফুল আসা বন্ধ হয় তাহলে দ্রুত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তর পরামর্শ নিয়ে কাজ করবেন।