নিম পাতা খুবই পরিচিত একটি পাতা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta Indica. সহজ কথায়, নিম গাছের পাতাকেই আমরা নিম পাতা বলে থাকি। এই নিম পাতার রয়েছে হাজারো ঔষধি গুণ।
গ্রামাঞ্চলে নিম পাতার রস মানুষ প্রায়ই ব্যবহার করে। বাচ্চাসহ বড়দের যেকোন চর্ম রোগ হলে নিম পাতার ব্যবহার অধিক লক্ষ্য করা যায়।
অনেকে চাল ভাজার সাথে নিম পাতা ভেজে খায় কোন কারন ছাড়াই। আসলে বিষয়টা কারন ছাড়া নয়। এটা খেলে শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়; যেমন- ব্যথা কমে যায়।
আজ আমরা এই নিম পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। বিশেষ করে এর বিভিন্ন প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে। তো চলুন শুরু করি।
নিম পাতার ঔষধি ব্যবহার:
- অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি: প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং গঠিয়া, বাত, এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি থেকে কোষগুলিকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- ক্যান্সার বিরোধী: ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়া রোধে সাহায্য করতে পারে। স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বকের যত্ন:ফোঁড়া, ব্রণ, একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
অন্যান্য ব্যবহার:
- কীটনাশক: কীটপতঙ্গ দূর করতে নিম পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এটা খুবই জনপ্রিয়।
- সার: জৈব সার হিসেবে নিম পাতা ব্যবহার করা হয়।
- জ্বালানি: শুকনো নিম পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- সাবান ও প্রসাধনী: নিম পাতার নির্যাস সাবান, শ্যাম্পু, লোশন এবং অন্যান্য প্রসাধনী তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহারের নির্দেশিকা:
- নিমের পাতা বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে শুকনো পাতা, গুঁড়ো, ক্যাপসুল, চা এবং তেল।
- আপনার জন্য কোন রূপটি সবচেয়ে ভালো তা নির্ধারণ করতে আপনার ডাক্তার বা একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে নিন।
- নির্দেশিত ডোজ মেনে চলুন।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের এই পাতা ব্যবহার করা উচিত নয়।
- যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের নিমের পাতা ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- অতিরিক্ত নিম পাতা ব্যবহার পেট খারাপ, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, নিম পাতার গাছ গ্রামাঞ্চলে প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়। শহরে একটু কম পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন দোকান থেকে কেনার চেয়ে বাসায় তৈরী করে ব্যবহার করা অনেক বেশি নিরাপদ।
বাসায় তৈরী করে ব্যবহার করলে সেটা খুবই কাজে দেয়। চেষ্টা করবেন নিজে নিম পাতা সংগ্রহ করে তা কাজে লাগানোর। এই গাছের ছায়াও আমাদের জন্য খুব উপকারী। সম্ভব হলে বাসায় একটা করে নিম গাছ লাগিয়ে রাখুন।
আরও পড়ুন: কাতিলা গাম খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নিন