সত্যিই এক অস্থির জেনারেশন তৈরী করছি আমরা। বিলিভ ইট অর নট এই জেনারেশনের স্পেসিফিক কোন লক্ষ্য নাই, এদের আদর্শিক কোন এম্বিশন নাই এবং এদের পবিত্র কোন মিশন নাই।
এরা কখনো বই পড়ে না, নিউজপেপার পড়ে না ও আউটডোর খেলাধুলায়ও এদের অনীহা রয়েছে।
এই অস্থির জেনারেশন রৌদ্রে হাঁটতে পছন্দ করে না, বৃষ্টিতে ভিজতে চায় না। কাঁদা-মাটি, ঘাস, লতাপাতায় এদের এলার্জি। এরা আধা কিলোমিটার গন্তব্যে যেতে আধা ঘন্টা রিক্সার জন্য অপেক্ষা করে। এরা অস্থির, প্রচন্ডরকম অস্থির এক জেনারেশন।
এরা পরিচিত সিনিয়রদের সালাম দেবে না, পাশ কাটিয়ে হনহন করে চলে যাবে অথবা গা ঘেষে পায়ে পাড়া দিয়ে চলে যাবে। ‘সরি’ বলার টেন্ডেন্সি এদের মধ্যে নাই। এরা অনর্থক তর্ক জুড়ে দেবে। না পাবেন বিনয়ী ভঙ্গি, না পাবেন কৃতজ্ঞতাবোধ। এদের উদ্ধত আচরণ, সদম্ভ চলাফেরায় আপনি ভয়ে কুকড়ে যাবেন। সংযত হওয়ার উপদেশ দিতে চাইলেই বিপদ, নাজেহাল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আপনি পাবলিক বাসে চড়ছেন, দেখবেন খালি সিট’টায় জায়গা পেতে সবচেয়ে জুনিয়র ছেলেটা বেশি প্রতিযোগিতা করবে। আপনাকে ধাক্কা-টাক্কা দিয়ে সটান বসে পড়বে। তার বয়সের দ্বিগুণ এই আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না।
বলছিলাম এই জেনারেশনের কথা। সবচেয়ে ভয়াবহ ফিতনার কথা শুনে যে মজলিসে এই জেনারেশনের দাঁড়িয়ে থাকার কথা, সেই মজলিসে তারা নিজের জন্য চেয়ার খোঁজে। যেখানে চুপ থাকার কথা, সেখানে জ্ঞান দিতে চেষ্টা করে।
সারা রাত ধরে অনলাইনে থাকে। সারা সকাল ঘুমায়। এরা সূর্যোদয় দেখে না, সূর্যাস্ত দেখে না। সূর্যোদয়ে বিছানায় থাকে আর সূর্যাস্তে মোবাইলে থাকে।
এরা সবাই ফাস্টফুডে আসক্ত। এরা আউটডোর খেলা অপছন্দ করে। এরা ইনডোর স্বস্তি পায়। নির্দিষ্ট করে বললে মূলত অনলাইন গেম তাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি।
এরা ইতিহাস পড়ে না, সাহিত্য বুঝে না। এরা নজরুল চিনে না, রবীন্দ্রনাথ চিনে না, ফররুখ চিনে না। সাদী, রুমি, হাফিজ ত বহু অচেনা প্রসঙ্গ। এরা বই বুঝে না, বই পড়ে না এবং বই কিনে না।
এরা নন-স্কিলড। এরা হাঁটতে পারে না, দৌড়াতে পারে না, গাছে চড়তে জানে না, সাতাঁর কাটতে পারে না। সাগর পাড়ি দেওয়ার সেই দুঃসাহসিকতা নাই, পাহাড় কেটে পথ তৈরী করার সেই অদম্য মনোবল নাই। এদের উচ্ছ্বাস নাই, আবেগ নাই, সৎ সাহস নাই। এদের একটাই স্কিল আর তা হলো স্মার্টফোন দ্রুত স্ক্রল করতে পারা।
এদের না আছে মূল্যবোধ, না আছে শ্রদ্ধাবোধ, না আছে শৃঙ্খলাবোধ। কখন চলতে হবে, কখন থামতে হবে, কখন বলতে হবে, কখন শুনতে হবে তা এরা জানে না। এরা না বুঝে সিনিয়রিটি, না বুঝে জুনিয়রিটি।
আখিরাত (মৃত্যুর পরের জীবন) সম্পর্কে এদের স্পষ্ট কোন ধারণা নাই। এরা সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানে না। এরা সৃষ্টি-স্রষ্টার সম্পর্ক সম্পর্কে উদাসীন। বস্তুর প্রতি এদের চরম আকর্ষণ। এরা টোটালী বস্তুবাদী, নিরেট ভোগবাদী। পরবর্তী পৃথিবীর নেতৃত্ব এরা দেবে ভাবতেই শিহরে উঠে হেজাজের কলম।
যে কথাগুলো বললাম তা আপনি মানতে পারেন, নাও মানতে পারেন। কিন্তু ভুল বলিনি। কথা হচ্ছে আপনাকে ভাবতে হবে। উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
এই জেনারেশন বড্ড বই বিমুখ। এরা টেবিলে বসতে চায় না। এরা লাইব্রেরী চিনে না। আসুন এদের হাতে বই তুলে দেই। এদেরকে টেবিলে বসাই। প্রত্যেকটা বাসায় একটা মিনি লাইব্রেরী গড়ে তুলি। একটা বড়োসড়ো বই বিপ্লব করতেই হবে।
এদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান দিতে হবে। কুরআন ও হাদীস ঘরে রেখে অর্থসহ পড়াতে হবে। নবী সাঃ এর জীবনী, সাহাবা চরিত, যুগে যুগে আত্মত্যাগী আলেমদের জীবনী, দেশ ও জাতির কল্যাণে, মানবতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের জীবনাতিহাস পড়াতে হবে পারিবারিকভাবেই; অন্যথা এরা হারিয়ে যাবে। পরিবার ও দেশের জন্য বোঝা ও অসন্তোষ ছাড়া আর কিছুই দেবে না এরা। তাই সকলের সুদৃষ্টি একান্তভাবে কামনা করছি।
লেখক: Md. Laycho Zaman
আরও পড়ুন: ভালো থাকার মানে বলতে আমরা কি বুঝি