দেশের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নদীগুলোর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এতে ১০টি জেলায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক এ আজম এবং ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে বের হয়েছেন। অন্যান্য উপদেষ্টারাও সেখানে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের জানান, ১০টি জেলায় ৩৬ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা আট জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর ঘটনা দুটি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ঘটেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী, যেখানে ছয়টি উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ আটকা পড়েছে।
বন্যার কারণে বিদ্যুৎ লাইনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে পরশুরাম, ফুলগাজী এবং ছাগলনাইয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কের বিঘ্নিত অবস্থা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, বাসিন্দাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি জানান, বন্যায় এখন পর্যন্ত ১০টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫০টি উপজেলার ৩৫৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে এবং প্রায় ২,৯৪,৯৪৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানির স্তর বাড়ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, পূর্ব এবং সংলগ্ন উজান এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নিচু এলাকায় মণু, খোয়াই ও ধলাই নদীর পানির স্তর স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে, বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব এবং সংলগ্ন উজান এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমবে।
তিনি আরও জানান, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিচু এলাকায় মূহুরি, ফেনী, গোমতী এবং হালদা নদীর পানি প্রথমে স্থিতিশীল থাকবে, তবে পরে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
বন্যায় আটকে পড়া পরিবারগুলোর সংখ্যা আট জেলায় মোট ৪,৪০,৪৮০টি। এ পর্যন্ত ১,৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে যেখানে ৭৫,৬৬৮ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ৪৪৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে যোগ দিয়েছে, এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) জলযান নিয়ে উদ্ধারে অংশ নিচ্ছে। তিনি জানান যে, ফেনীতে ১৬০ জন সেনা সদস্য এবং ৪০টি উদ্ধারকারী নৌযান, ৭১ জন নৌবাহিনী সদস্য এবং আটটি উদ্ধারকারী নৌযান মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের সকল জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বরে যোগাযোগের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নাজমুল আবেদিন জানিয়েছেন যে, আটটি বন্যাকবলিত জেলার জন্য মোট ১.৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ১৩,৬৫০ মেট্রিক টন ত্রাণ চাল ও ১১,০০০টি শুকনা খাদ্য প্যাকেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন অফিসের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে যাতে মানুষকে সহায়তা করতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত করা যায়।
আরও পড়ুন: বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পদক্ষেপ: তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা