টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত? আপনার খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিন, বিশেষ করে আপনি কতটা মাংস খাচ্ছেন তা বিবেচনা করা জরুরি। সম্প্রতি ‘দি ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লাল মাংস খাওয়ার সাথে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ’-এর জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক ডা. নিটা ফরোহি বলেন, “টাইপ টু ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা উচ্চ থাকায় দেখা দেয়।” তার মতে, প্রক্রিয়াজাত ও অপ্রক্রিয়াজাত উভয় ধরণের লাল মাংস নিয়মিত খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ডা. ফরোহি আরও উল্লেখ করেন, এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, নিয়মিত লাল মাংস খাওয়ার সাথে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। যদিও এটি একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা, গবেষকরা মাংস খাওয়ার সাথে ডায়াবেটিস হওয়ার সরাসরি কোনো কারণ দেখাতে পারেননি।
এই বিষয়ে ‘লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’র পুষ্টি বিষয়ের অধ্যাপক ডা. হিল্ডা মলরুনি বলেন, “গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমানো উচিত। তবে আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন ছিল, যেমন পোলট্রি মাংস এবং রান্না পদ্ধতির কোনো প্রভাব আছে কিনা।”
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২০টি দেশের ২০ লাখ মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি তাদের খাদ্যের গুণগত মান, শারীরিক কার্যক্রম, ধূমপান, এবং অ্যালকোহল গ্রহণের তথ্যও পর্যবেক্ষণে আনা হয়। যদিও পারিবারিক ইতিহাস এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের মতো বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তথাপি বিশাল এই তথ্যভাণ্ডারের ফলাফল দেখায় যে লাল মাংস খাওয়ার সাথে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে।
ডা. ডুয়ান মেলোর, যিনি ‘অস্টন ইউনিভার্সিটি’র সাথে যুক্ত এবং ব্রিটিশ ডায়েটেটিক অ্যাসোসিয়েশনের অনারারি ফেলো, সিএনএন-কে বলেন, “এই গবেষণা জোরালোভাবে নির্দেশ করে যে, লাল মাংসের খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে, সবজি ও ফলের মতো উদ্ভিজ্জ খাবারের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।”
কীভাবে ঝুঁকি কমানো যায়?
গবেষণায় উঠে এসেছে, লাল মাংসের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। মলরুনি বলেন, “প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, বেকন, হটডগ, সালামি ইত্যাদিতে উচ্চমাত্রার চর্বি ও লবণ থাকে, যা স্বাস্থ্যকর নয়।” এর পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
ডা. মেলোর আরও যোগ করেন, “সবজি, ফল, এবং শস্যজাত খাবার এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।” তাই, খাদ্যাভ্যাসে লাল মাংস কমিয়ে সবজি এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: কসমেটিক্স ত্বকের কতটুকু ক্ষতি করতে পারে | ভয়াবহ বার্তা