বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলছেন, দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত এই চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য দূর করার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। ঢাকায় পিটিআইয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো দেশই লাভবান হচ্ছে না এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
ড. ইউনূসের মতে, পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত এবং বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তিনি এ বিষয়ে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করার ফলে কার্যত কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। আমরা জানি না আমরা কতটুকু পানি পাবো, যা আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করছে। এটি সমাধান করা জরুরি।”
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ২০১১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তির অনুমোদন না দেওয়ার ফলে এটি বাস্তবায়িত হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, তার রাজ্যে পানির সংকট রয়েছে। ড. ইউনূস জানান, “এটি নতুন কিছু নয়, এটি একটি পুরোনো বিষয়। পাকিস্তান শাসনামল থেকেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার তখন প্রস্তুত ছিল না, কিন্তু আমাদের এটির সমাধান করতে হবে।”
তিনি আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে পানিবণ্টন চুক্তি সমাধানের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অধিকারসমূহ বজায় রাখতে হবে। ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে সমাধান করতে হবে এবং ভাটির দেশগুলোর নির্দিষ্ট অধিকার থাকতে হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে পানিসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন এবং উজান ও ভাটির দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে চলার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে ড. ইউনূস মন্তব্য করেন, নতুন সরকার এ বিষয়ে আলোচনা করবে, তবে চাপ সৃষ্টি করা নয়, সমাধান খোঁজার উপর জোর দিতে হবে।
বন্যার বিষয়ে ভারতকে দায়ী করার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের কথা বলেন। তিনি বলেন, “বন্যার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, চুক্তির আগে এমন সংকট মোকাবিলায় দুই দেশের মধ্যে কোনোরকম সমন্বয় থাকা উচিত এবং এজন্য কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই।
ড. ইউনূস সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, “এই ধরনের হত্যাকাণ্ড সমস্যার সমাধান নয়।” তিনি সীমান্ত সমস্যা মোকাবিলার জন্য সহানুভূতি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
সবমিলিয়ে, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির সমস্যা সমাধানে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে সুষ্ঠু আলোচনা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: অরুণা বিশ্বাসের ইউটার্ন: সমালোচনা এবং পরবর্তীতে নতুন অবস্থান