নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরে অবস্থিত দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে আজ ভোরে ঘটে যাওয়া একটি সহিংস হামলার ঘটনায় এলাকাজুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দরবারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ জমে ছিল। এই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দরবারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
হামলার কারণ ও পটভূমি
গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়ানবাগী পীরের অনুসারীরা তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি আলোচনা সভা এবং জলসার আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় মসজিদের মুসল্লিদের আপত্তির মুখে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। মসজিদের পক্ষ থেকে পীরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত এবং ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এই ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে, যা পরবর্তী সহিংসতার বীজ বুনে দেয়।
হামলার বিবরণ
আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে হামলা চালানোর আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয় লোকজন একত্রিত হয়ে দরবারের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর দরবারের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। হামলাকারীরা দুটি টিনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর মতামত
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় মুসল্লিদের একজন, মসজিদের ইমাম মাসুম বিল্লাহ, জানান যে দেওয়ানবাগী পীরের অনুসারীরা ইসলামবিরোধী কাজকর্ম চালিয়ে আসছিলেন, যা নিয়ে স্থানীয় তৌহিদি জনতা দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত ছিলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, আজ সকালে যখন স্থানীয় লোকজন দরবারের সামনে অবস্থান নেয়, তখন পীরের অনুসারীরা ইটপাটকেল ছোড়ে। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সহিংসতায় রূপ নেয়।
প্রশাসনের ভূমিকা
ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি, তবে এলাকাজুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যাতে পুনরায় কোনো ধরনের সহিংসতা না ঘটে।
পরিশেষে বলা যায়, এই ধরনের সহিংস ঘটনা একটি সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধর্মীয় অনুভূতির কারণে ঘটিত এ সহিংসতার পরিণতি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক অস্থিরতা। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধানের মাধ্যমে পুনরায় এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: অরুণা বিশ্বাসের ইউটার্ন: সমালোচনা এবং পরবর্তীতে নতুন অবস্থান