সিলেট সীমান্ত দিয়ে নেতাকর্মীদের ভারত পালানোর ঘটনা: একটি বিশ্লেষণ

৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে কয়েকশ’ নেতাকর্মী গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছেন। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা ভারতের গৌহাটি, শিলং, ডাউকি, এবং জোয়াইসহ কয়েকটি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের অবস্থানের তথ্য জানা গেছে। যদিও তাদের পালানোর ঘটনা বেশি আলোচিত হয়েছে, তবে বর্তমানে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর ফলে পালানোর হার কমে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের গ্রেপ্তার এবং সীমান্তের ওপারে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার মৃত্যুর ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ঘটনাগুলি সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে।

পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা কোথায় আছেন?

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংসহ কয়েকটি এলাকায় বেশ কয়েকজন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা অস্থায়ী পাসকার্ড নিয়ে থাকছেন। তবে অনেকেই অবৈধভাবে অবস্থান করছেন, যা নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এখনও কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা আপাতত নিরাপদে বসবাস করতে পারছেন। তবে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে, কারণ তাদের বিরুদ্ধে দেশে একাধিক মামলা রয়েছে।

চোরাকারবারিদের ভূমিকা

সীমান্ত দিয়ে পালানো এই নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করেছে বেশ কিছু চোরাকারবারি। সিলেট সীমান্তের কানাইঘাটের ডোনা ও সুরইঘাটে সনাতনপুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী ভারতে প্রবেশ করেছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ডোনা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় আটক হয়েছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তিনি জানান, সীমান্ত পাড়ি দিতে দালালদের সহায়তা নিয়েছিলেন। দালালরা তাকে মারধর করে এবং তার সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা নিয়ে যায়।

সীমান্ত পরিস্থিতি এবং দালালদের কার্যক্রম

সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে নেতাকর্মীরা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছেন। ডোনা সীমান্তে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য বেশি। সাবেক চেয়ারম্যান সোলেমান আহমদ এবং মেম্বার মোস্তাক আহমদের নামও এই পাচারের সঙ্গে জড়িত হিসেবে উঠেছে, যদিও তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে, তারা বরং দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দিচ্ছেন।

গোয়াইনঘাটের মাতুরতল সীমান্ত এলাকা দিয়েও শতাধিক নেতাকর্মী পালিয়ে গেছেন। এই প্রক্রিয়ায় গোয়াইনঘাট ছাত্রলীগের সভাপতি সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক রাজীবের ভূমিকা ছিল। তারা নিজেরাও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালানোর এ ধরনের ঘটনা আরও কতদিন চলবে, তা বলা মুশকিল। যদিও সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর ফলে পালানোর সংখ্যা কমে এসেছে, তবে নতুন কোনো পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকাগুলিতে বিশেষ নজরদারি বজায় রাখা প্রয়োজন।

সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করা উচিত এবং যারা পালিয়ে গেছেন তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। তবে, এসব নেতাকর্মীদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ভ্যানে লাশের স্তূপ: একটি ভয়ঙ্কর ভিডিও এবং তার অনুসন্ধান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top