নোয়াখালীতে ব্যাপক বন্যায় পানি বন্দী প্রায় ২০ লাখ মানুষ

বাংলাদেশের একটি বিশাল অংশ কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে প্লাবিত হয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদীতে হাঁটু-গভীর পানি জমেছে। জেলার নয়টি উপজেলায় ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ২০ লক্ষাধিক মানুষ আটকে পড়েছে। চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলাও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় আমন ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। মাঠে অতিরিক্ত পানি জমে থাকায় অনেক এলাকায় কৃষকরা আমন ধানের চাষ করতে পারছে না। সড়কগুলো তলিয়ে গেছে এবং বাড়িগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ও মাছ চাষিরা পানির স্তর বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মাছের ঘের ইতিমধ্যে ভেসে গেছে। মাছ চাষিরা বড় ঘেরগুলোতে জাল ব্যবহার করে তাদের মাছ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়, মেঘনা নদীর তীরবর্তী উত্তর চরবংশী ও চরাবাবাবিল ইউনিয়নের ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি বৃদ্ধির কারণে সাধারণ শিক্ষামূলক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বের ফাটলের কারণে পরশুরাম উপজেলার ৫৫টি গ্রাম এবং ফুলগাজী উপজেলার ৩০টি গ্রাম তৃতীয়বারের মতো প্লাবিত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের কাবাখাল এলাকায় রাস্তা তলিয়ে যাওয়ার কারণে সাজেকের সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মৌলভীবাজার জেলার চারটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নোয়াখালীতে সেনা সহায়তা চাওয়া হচ্ছে

নোয়াখালীর পানিবন্দি মানুষরা খাল পরিষ্কার ও পানি নিষ্কাশনের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন। জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। সারাদিনই বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ ফুট বেশি জোয়ারের কারণে নদী থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। মেঘনা নদীর তীরবর্তী অন্তত ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জোয়ার এবং টানা ৫ দিনের বৃষ্টির কারণে শিক্ষাদানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এসব চর এলাকায় ক্লাস বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ফেনী

পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের ৫৫টি গ্রাম এবং ফুলগাজী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামসহ অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুমিল্লা

কামালনগরে ৯৭৬ হেক্টর আমন ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীজের অভাবে নতুন চারা রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

চাঁদপুর

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার দূরবর্তী এলাকা এবং চাঁদপুরের গ্রামগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মাছের ঘের, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, বাড়ি, কৃষিজমি, পোল্ট্রি ফার্ম এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ঘরবাড়ি ধসে পড়ার ভয়ে বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

কুমিল্লা

নাঙ্গলকোটে অনেক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পৌর সদর ও গ্রামগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পুরো জেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

রাঙ্গামাটি

জেলার বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সড়কে ভূমিধসের কারণে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

ভোলা

ভোলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

মৌলভীবাজার

জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই এবং জুড়ি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, নোয়াখালী এবং এর আশেপাশের অঞ্চলের মানুষকে প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি, এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সরকারের এগিয়ে আসতে হবে।

আরও পড়ুন: ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো ১৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top